আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে জুলাই গণহত্যার অভিযোগে মূল বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। সঙ্গে রয়েছেন তার মন্ত্রিসভার সদস্য, পুলিশের সাবেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, সাবেক বিচারপতি এবং সচিবগণ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল প্রসিকিউশন সূত্রে এমনই আভাস পাওয়া গেছে।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে এ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে বিচার শেষে জামায়াতের শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতার ও বিএনপির এক নেতার ফাঁসির দণ্ডও কার্যকর করা হয়।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একই ট্রাইব্যুনালে আসামির কাঠগড়ায় ঠাঁই হয় পতিত সরকারের মন্ত্রী, পুলিশ, বিচারক ও সচিবের। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে চিফ প্রসিকিউটর মামলা করেন।
এসব নেতার বিচার বর্তমানে প্রি-ট্রায়াল স্টেজে অর্থাৎ মামলা প্রাথমিক তদন্ত অবস্থায় রয়েছে। সেই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন আসামি ছাড়া অনেককে ১৮ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
তারা হলেন – সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ড. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও সচিব জাহাংগীর আলম।
যদিও একটি মামলায় রিমান্ডে থাকার কারণে সেদিন সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি। পরবর্তীতে সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান এবং কয়েকজন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাকেও হাজির করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর কার্যালয় থেকে জানা যায়, এসব আসামির তালিকায় কিছু দিনের মধ্যে যুক্ত হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু এবং কামরুল ইসলাম। তারা বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এই দুই নেতাকে জুলাই গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিচার করার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।
এসব আসামির বিরুদ্ধে জুলাই- আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ভুক্তভোগীদের করা নানা অভিযোগ এবং সেসব অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ভুক্তভোগীদের পক্ষ হয়ে মামলাটি করেন।
বর্তমানে মামলাটি ‘প্রি ট্রায়াল স্টেজে’ অর্থাৎ মামলা প্রাথমিক তদন্ত অবস্থায় থাকলেও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী জানুয়ারি মাস থেকে এসব নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার মূল বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছে প্রসিকিউশন টিম।
গেল ১৮ নভেম্বর শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রীদের কেন বিচার করা হবে এ বিষয়ে আদালতের সামনে তাজুল ইসলামের উল্লেখ করা কারণগুলোর মধ্যে ছিল, ছাত্র জনতাকে হত্যা, নির্বাচনের নামে প্রহসন, বিডিআর ট্র্যাজেডির কারণ, শাপলা চত্বরের হেফাজতের ওপর গণহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও আয়না ঘর তৈরি, ১ হাজার ১১৯ জনকে বিচার বহির্ভূত হত্যা, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার, শেয়ার বাজার লুট, রাজাকারের নাম দিয়ে ট্যাগ দেওয়ার কারণে দেশের মানুষকে পৃথক করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী দিয়ে ছাত্র জনতার ওপর হামলা, জুলাই আগস্টের আন্দোলনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়ার কারণে ‘সুপিরিয়র হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রীদের বিচার’ করার কথা আদালতের সামনে উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ইন্টারপোলে রেড এলার্ট জারি করবে সরকার