ভৌগোলিকভাবে কায়েতপাড়া বাজার বালু নদীর পশ্চিম পাড়ে। এটি রাজধানীর খিলগাঁও থানার ৭৫ নং ওয়ার্ডের অংশ। কায়েতপাড়া বাজারেই ২শ বছরের পুরনো নৌকার হাট। সাপ্তাহে দুই দিন এখানে পাওয়া যায় অল্প মূল্যে কারিগরদের তৈরী করা মৌসুমী কোষা নৌকা। শনি ও বৃহস্পতিবার বসা এ হাটে বিক্রি হয় শত শত নৌকা। যদিও কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমে যাচ্ছে নৌকা সংশ্লিষ্টদের ব্যস্ততা।
প্রাচীনকাল থেকে সওদা পাতির হাট কায়েতপাড়াতে গড়ে ওঠে। এক সময় বড় নৌকা তৈরী ও হাট বসতো। কিন্তু এখন শুধু ছোট নৌকার হাট বসে সপ্তাহে দুদিন। জলাবদ্ধ এলাকা ও নদী পাড়ের লোকজন বর্ষা এলেই নৌকা কিনতে আসেন এখানে। তবে স্থানীয়রা নৌকার পরিবর্তে চান টেকসই স্থায়ী সড়ক। পাশাপাশি বালু নদীর উপর ব্রিজ হলে নৌকা নির্ভরতা কমে যাবে বলে মনে করেন তারা।
কোষা নৌকার কদর বাড়ে কেবল বর্ষা এলে। ৩ মাস থাকে এসব নৌকার চাহিদা। কারিগররা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০ থেকে ২৫টা কোষা তৈরী করতে পারেন। প্রথমে কাঠ চিরাই করে,আকারে নকশা করেন কারিগররা। পরে কাঠ বসিয়ে তার কাটা লাগিয়ে দেন জোড়ায় জোড়ায়। পরে পুডিং করে আলকাতরা লাগিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করা হয়। এসব নৌকা কোনটা টিকে ২ বছর কোনটা আবার ১০ বছরেও নষ্ট হয় না। একটি নৌকা তৈরীতে সময় লাগে মাত্র কয়েক ঘন্টা। এসবের একেকটার দাম হাঁকা হয় ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। আকার ভেদে,কাঠের মান ও ডিজাইন বিবেচনায় এসব নৌকার দাম নির্ধারণ হয় বলে জানিয়েছেন নৌকার হাট সংশ্লিষ্টরা। কাঠের কারিগর ব্যয় আর ইজারা প্রদানসহ নানা খরচেরও রয়েছে ফিরিস্তি।
কায়েতপাড়ার এ নৌকার হাট রক্ষার চেয়ে স্থানীয়দের দাবী রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্টের। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ৭৫ নং ওয়ার্ডে থাকলেও নৌকায় চলাচল মেনে নিতে পারছেন না তারা। তবে নদী ও খাল বিলের বাহন কোষার কদর বাড়লেও কারিগরের অভাব রয়েছে বেশ। ক্রমেই কমতে শুরু করেছে কারিগর ও নৌকা ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা। হাটটির আগের জৌলুশ নাই।
রাজধানীর শেষ সীমান্তে বালু নদীর পারের নৌকার হাটে টিকে থাকা কারিগর ব্যবসায়ীদের পেশা বদলের হিড়িক পড়েছে। তাই অচিরেই হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প। জলাশয়ের একমাত্র বাহন নৌকা তৈরীর এমন চিত্রও দেখা যায় না খুব একটা। তবে এ শিল্প রক্ষার দাবী করেছেন সচেতন মহল।