19 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি চান ১৯৪ জন উপসচিব

গত ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক পদে পদায়ন না পেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও যুগ্ম সচিবের(এপিডি) দপ্তরে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৬০ থেকে ৭০ জন উপসচিব। তারা ১০ সেপ্টেম্বর একজন যুগ্ম সচিবকে তার দপ্তরে আটকে রাখেন এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে গিয়ে হট্টগোল করেন।

জনপ্রশাসনে পদোন্নতির দাবি অব্যাহত থাকার মাঝেই ১৯৪ জন উপসচিব যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন।

তারা অভিযোগ করেছেন, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ন্যায্যভাবে পদোন্নতি পাননি। এ কারণে অনেক কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পদোন্নতি ও ভালো পদের জন্য প্রস্তাব দিচ্ছেন।

এদের পাশাপাশি এক শ্রেণির কর্মকর্তারা আসছেন, আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে সুবিধাজনক পদ পেয়েছেন; এমন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে। এই পরিস্থিতি প্রশাসনের ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করছে।

গত ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক পদে পদায়ন না পেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও যুগ্ম সচিবের(এপিডি) দপ্তরে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৬০ থেকে ৭০ জন উপসচিব।

এসব কর্মকর্তারা ১০ সেপ্টেম্বর একজন যুগ্ম সচিবকে তার দপ্তরে আটকে রাখেন। এমনকি তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে গিয়ে হট্টগোল করেন ও তর্কে জড়িয়ে পড়েন।

এ ঘটনার এক সপ্তাহ পার না হতেই গতকাল (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া বাকি ২৫ টি ক্যাডার থেকে উপসচিব হওয়া ১৯৪ জন কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির দাবি নিয়ে হাজির হয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।

মঙ্গলভার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেসুর রহমান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানান।

মঙ্গলবার যেসব কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতির দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুরুল আমিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দফায় দফায় পদোন্নতি দেওয়া হলেও তাদেরকে শুধু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

তিনি বলেন, “১৩ থেকে ২২ তম বিসিএস পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্য ২৫ টি ক্যাডারের ১৯৪ জন উপসচিব পদোন্নতি বঞ্চিত আছেন। আমরা ২০২৩ সাল থেকে পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছি।”

উপসচিব নুরুল আমিন বলেন, “আজকে জনপ্রশাসন সচিব বলেছেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভাপতি, তিনি তারিখ দিলে সভা আহ্বান করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এরপর বঞ্চিত কর্মকর্তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে গেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, জনপ্রশাসন সচিব সভা আহ্বান করার জন্য প্রস্তুত কিনা তা তিনি জানেন না। জনপ্রশাসন সচিব চাইলে তিনি (মন্ত্রিপরিষদ সচিব) সভার তারিখ জানাবেন।”

গত ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দুটি আদেশে ৫৯ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের বড় অংশ দুর্নীতিবাজ ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাড়তি সুবিধাভোগী বলে অভিযোগ তোলেন নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

ডিসি নিয়োগ নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার পর ১১ সেপ্টেম্বর ৮ জেলার ডিসির নিয়োগ বাতিল করা হয়। পাশাপাশি কর্মকর্তারা কেনো সরকারের সিদ্ধান্ত মানছেন না বা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন– তা তদন্তে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

গত ১১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেসুর রহমান কর্মকর্তাদের এ ধরনের আচরণকে ‘অশোভন ও অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে উল্লেখ করেন।

এদিকে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরিতে পদোন্নতি বঞ্চিত প্রায় আড়াই হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের সুযোগ সুবিধা ফিরে পেতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।

১৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন সচিব জানিয়েছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদোন্নতি বঞ্চিত অবস্থায় অবসরে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দিতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়।

জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “সাবেক সরকার পতনের পর প্রশাসন ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি বঞ্চিতদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার নীতিগত অবস্থান রয়েছে সরকারের। তবে সরকারের এই অবস্থানকে এক শ্রেণির কর্মকর্তারা সুযোগ হিসেবে নিচ্ছেন। সবাই যে ন্যায্য দাবি নিয়ে আসছেন তা নয়।”

তিনি যুক্ত করেন, “তবে সরকার যেভাবে পদোন্নতি, নিয়োগ ও পদায়ন করছে, সেটাও কর্মকর্তাদের এ ধরনের দাবি তুলতে উদ্বুদ্ধ করেছে।”

আরেকজন কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের এই জোর করে পদোন্নতি এবং  পদায়নের  চর্চা থেকে বের করতে না পারলে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা চলতেই থাকবে।

গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে একজন সচিব, তিনজন অতিরিক্ত সচিব এবং ছয়জন উপসচিব টিবিএসকে জানিয়েছেন, তারা অধীর আগ্রহে বদলির আদেশের জন্য অপেক্ষা করছেন। তারা মনে করেন, যেকোনো সময় তাদের বদলি হয়ে যাবে কারণ এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও প্রশাসনের বাইরের লোকদের চাপে ইতোমধ্যেই তাদের সহকর্মীদের মধ্যে অনেকের বদলি হয়েছে। 

৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ঐ ঘটনার তিনদিন পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রশাসনের শীর্ষপদে ব্যাপক রদবদলের ঘটনা ঘটেছে, যা এখনও চলমান আছে। সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ ও আনসার প্রশাসনেও আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন।

গত প্রায় দেড় মাসে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নতুন করে বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ করা হয়েছে কয়েকশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে।

অনেকেই হয়েছেন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি)। বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ইতোমধ্যেই বেশিরভাগ বাদ পড়েছেন। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।

তবে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে স্থায়ী চাকরি করেন এমন কয়েকজন কর্মকর্তা সচিবলায়ে পদোন্নতি ও পদায়নের জন্য বিক্ষোভকে বিরল ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন