সুরাইয়া আক্তার, নাগরিক টিভি
মানুষ পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় পা ফেলতে সক্ষম হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অজানাকে জানা মানুষের জন্য আরো সহজ থেকে সহজতর হয়েছে। ভ্রমণবিলাসী মানুষ দুনিয়ার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছে খুব সহজেই। তবে বঙ্গোপসাগরে এমন এক দ্বীপ রয়েছে যা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত হলেও এই দ্বীপে এখনো পর্যন্ত কেউ বসবাসের কথা চিন্তা করতেই পারেনি। এই রহস্যময় দ্বীপে মানুষ গেলে আর ফিরে আসে না। এ কথাটি শুনে আপনি হতভম্ব হয়ে যেতে পারেন। এটিকে নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপ বলা হয়।
বঙ্গোপসাগরের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত প্রবাল প্রাচীরে ঘেরা নিষিদ্ধ ও ভয়ংকর একটি দ্বীপ নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ড বা উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ।
এই দ্বীপটিতে বসবাসকারী অধিবাসীদের বলা হয়, সেন্টিনেলিজ এবং তারা এমন এক উপজাতি যাদের সঙ্গে সমগ্র বিশ্বের কোনো যোগাযোগ নেই। তাদের ভাষার নাম দেওয়া হয়েছে সেন্টিনেলি ভাষা। এরা হলো আধুনিক সভ্যতার শেষ যোগাযোগ বিহীন উপজাতি।
এখানে আজ পর্যন্ত সফলভাবে মানুষ ভেতরের দিকে প্রবেশ করতে পারেনি। যারা ভুল করে পা ফেলেছিল তাদের নির্মম পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। ভৌগলিকভাবে এটি ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এই দ্বীপটির উপর ভারতের কোন কতৃত্ব নেই।
দ্বীপটির আয়তন ৭২ বর্গকিলোমিটার। এখন পর্যন্ত সেন্টিনেল দ্বীপের জনসংখ্যার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয় সর্বাধিক ৪০০ জন বাসিন্দা রয়েছেন সেখানে। এখানকার আদিবাসীরা ৭০০০ বছর ধরে দ্বীপটিতে বাস করছে। সে হিসেবে এখানকার আদিবাসীরা পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীন একক নৃতাত্ত্বিক অধিবাসী।
বিশ্বের অন্যান্য যে সমস্ত উপজাতি আছে, তাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা সেন্টিনেলরা। এরা একে অপরের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলেন, তা তাদের সবচেয়ে কাছের উপজাতির পক্ষেও বোঝা অসম্ভব। মনে করা হয়, এই আদিম মানুষেরা আফ্রিকা থেকে এসেছিলেন এই দ্বীপে।
কথিত রয়েছে, সেন্টিনেল দ্বীপের উপজাতির মানুষজন নরমাংসভোজী। কোনো বহিরাগত সেখানে গেলেই তাদেরকে এরা মেরে ফেলে। দ্বীপের দুর্গম প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে উপজাতিদের এমন হিংস্র আচরণ বলে ধারণা করা হয়।
১৯৭৩ সালে এক গবেষক দল এখানে এসে পৌঁছেছিল। ভাষা বোঝা যেতে পারে এমন তিন জনকে সঙ্গে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল যেনো উভয় পক্ষের বোঝাপড়া সহজ হয়। কিন্তু তারা ছিল অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তারা বহিরাগতদের একদমই সহ্য করতে পারে না।
মার্কিন এক ধর্মযাজক খৃষ্ট ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ নিষিদ্ধ দ্বীপে পাড়ি জমান। তাকে তীর ছুড়ে হত্যা করা হয়। তারা কাউকে হত্যা করলে সে মৃতদেহ কে কবর দিয়ে, কিছুদিন পর সেই মরদেহ কবর থেকে বের করে বাশের সঙ্গে বেঁধে সমুদ্রের তীরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে তারা বহিরাগতদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে থাকে।
হাজার হাজার বছর ধরে সেন্টিনেলিজদের বসবাস বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপে। দ্বীপে রয়েছে ঘন সবুজ বনভূমি, বাসিন্দাদের জন্য ছোট ছোট কুঁড়েঘর। এদের পেশা মূলত শিকার করা, মৃত পশুপাখির মাংস এবং ফলমূল তাদের খাবার।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তারা আগুনের ব্যবহার জানে না, চাষাবাদ করতেও জানে না। বস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে গাছের ছাল-বাকল এবং পশুর চামড়া। সেন্টিনেলিজদের কাছে বাইরের জগৎ যেমন অজানা, তেমনি দ্বীপের মধ্যে বাইরের কাউকে নাক গলাতে দেয় না তারা।
গবেষকদের ধারণা, হাজার বছর আগে সেন্টিনেলিজরা আফ্রিকা থেকে এসেছিল বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপে। বাইরের কোনো মানুষকে তারা তাদের দ্বীপে প্রবেশের অনুমতি দেয় না। প্রতিবারই অনুপ্রবেশকারীরা সেন্টিনেলিজদের বিষাক্ত তীরের আক্রমণের শিকার হয়েছে। অনেকের মৃত্যুও ঘটেছে। তারা নিজেদের কে বহির বিশ্ব থেকে রক্ষা করতে এই ধরনের আচরন করে থাকে।