29 C
Dhaka
বুধবার, অক্টোবর ১৬, ২০২৪
spot_imgspot_img

সাইবার বুলিয়িং, আধুনিক যুগের নীরব আতঙ্ক!

সাইবার অপরাধ, বিশেষত সাইবার বুলিয়িং, আধুনিক যুগে এক নতুন মনস্তাত্ত্বিক অত্যাচারের আরেক নামে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে মানুষ প্রতিনিয়ত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত থাকছে। ফলে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। সাইবার বুলিয়িং হলো অনলাইনে অপমান, হুমকি বা অবমাননাকর আচরণ করা, যার ফলে একজন ব্যক্তির মানসিক, সামাজিক এবং কখনো কখনো শারীরিক ক্ষতিও হতে পারে।

বুলিয়িং কী?

ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে হয়রানি করার নামই সাইবার বুলিয়িং। এটি সামাজিক মিডিয়া, মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম, গেমিং প্ল্যাটফর্ম এবং মোবাইল ফোনেও ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে যাদেরকে টার্গেট করা হয় তাদেরকে ভয় দেখানো, রাগিয়ে দেওয়া, লজ্জা দেওয়া বা বিব্রত করার জন্য বার বার এরূপ আচরণ করা হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়:

১. সামাজিক মাধ্যমে কারো সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া বা বিব্রতকর অথবা অবমাননাকর ছবি পোস্ট করা।

২. মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্ষতিকর মেসেজ দেওয়া বা হুমকি দেওয়া।

৩. অন্যের ছদ্মবেশ ধারণ করে তার পক্ষে আর একজনকে ম্যাসেজ পাঠানো।

মুখোমুখি বুলিয়িং এবং সাইবার বুলিয়িং প্রায়ই একে অপরের পাশাপাশি ঘটতে পারে। তবে, সাইবার বুলিয়িং একটি ডিজিটাল ট্রেক রেখে যায়। এই ডিজিটাল পদচিহ্ন এমন একটি রেকর্ড যা কার্যকর প্রমাণ হিসাবে কাজ করতে পারে এবং অপব্যবহার বন্ধে সহায়তা করতে প্রমাণ সরবরাহ করতে পারে।

বুলিং বলতে মূলত মানসিক বা মৌখিক অত্যাচার বোঝায়, যেখানে একজন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে অন্যকে অপমান করে, হুমকি দেয় বা হেনস্তা করে। সাইবার বুলিংয়ের ক্ষেত্রে, এই অত্যাচার ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়। এটি একজনের মানসিক শান্তি নষ্ট করে এবং অনেক সময় সামাজিকভাবে তাকে একঘরে করে তোলে।

ফেসবুক লাইভে বিভিন্ন ধরণের প্রচার-প্রচারণায় সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন অনেকে। লাইভ সেশনে কিছু বিকৃত মানসিকতার ইউজার খারাপ এবং অশ্লীল মন্তব্য করে। এতে ব্যবহারকারী প্রায়ই মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং হেনস্তার মধ্যে পড়েন। এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটছে, যা সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।

সাইবার বুলিংয়ের প্রভাব:

মানসিকভাবে এ সময় বিরক্ত বোধ হয়, বিব্রত লাগে, নিজেকে বোকা মনে হয়, এমনকি নিজের উপর রাগ হয়
আবেগগতভাবে-লজ্জাবোধ হয় বা নিজের পছন্দের জিনিসের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, এমন বোধ হয়।
শারীরিকভাবে ক্লান্ত বোধ করেন অনেকে, ঘুম না হওয়া, বা পেটের ব্যথা এবং মাথা ব্যথার মতো লক্ষণগুলোও দেখা যায়।

আপনাকে কেউ উপহাস করছে বা অন্যের দ্বারা আপনি হয়রানির শিকার হচ্ছেন আপনার এমন অনুভূতি আপনাকে অন্যের সাথে কথা বলতে বা কোনো সমস্যা সমাধান করার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে, সাইবার বুলিংয়ের ফলে কখনও কখনও মানুষ তার নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিতেও দ্বিধা করে না। সাইবার বুলিয়িং একজনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

সাইবার বুলিং শুধু মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তা না, এটি একজন মানুষের আত্মবিশ্বাসের উপর আঘাত হানে এবং ভুক্তভোগীকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী, নারী এবং বিনোদন জগতের তারকারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে, তাদের ব্যক্তিগত জীবন মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে সাইবার বুলিং দীর্ঘমেয়াদী মানসিক আঘাত সৃষ্টি করে।

সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় কি?

. প্রমাণ সংরক্ষণ

বুলিংয়ের শিকার হলে সর্বপ্রথম সেই ঘটনার প্রমাণগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। স্ক্রিনশট, মেসেজ বা যে কোনো ধরনের তথ্য জমা রাখতে হবে, যা পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপে সহায়ক হবে।

. পাল্টা আক্রমণ না করা

বুলিংয়ের শিকার হলে কখনোই পাল্টা আক্রমণ করা যাবে না। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। বরং যতটা সম্ভব বাগবিতন্ডা এড়িয়ে চলা এবং নিজের মানসিক শক্তি ধরে রাখা জরুরি।

৩. পরিবার বা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা

অনেক ভুক্তভোগী নারী বা কিশোর-কিশোরী এই বিষয়টি পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করতে দ্বিধাবোধ করেন। কিন্তু এটি করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ আপনাকে মানসিক সহায়তা দিতে পারবে কাছের মানুষগুলোই।

৪. সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লক করা

যদি কেউ আপনাকে হেনস্তা করে, সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিন। অযথা তর্কে জড়ানো কোনোভাবেই সমাধান নয়।

৫. আইনি সহায়তা গ্রহণ

যদি বুলিংয়ের প্রভাব শারীরিক হুমকি বা জীবননাশের পর্যায়ে পৌঁছায়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সাহায্য নিতে হবে। বাংলাদেশে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জরুরি পুলিশ সেবা পাওয়া যায়।

সাইবার বুলিং একটি বাড়ন্ত সমস্যা, যা মোকাবিলায় সচেতনতা ও সঠিক আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন। তাই এতে ভীত না হয়ে বরং সাহসী হয়ে মোকাবেলা করা উচিত।

এছাড়াও, যখন অনলাইনে বুলিয়িং ঘটে, তখন এটি অপরিচিতসহ বহু মানুষের অযাচিত মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। যেখানেই এটি ঘটুক না কেন, আপনি যদি এটিতে ভাল বোধ না করেন, তাহলে এর বিরুদ্ধে আপনার সোচ্চার হওয়া উচিত।

spot_img
spot_img

আরও পড়ুন

spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন