22 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

ঢাকায় পৌঁছেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

আনোয়ার ইব্রাহিম ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। দুপুর আড়াইটায় তার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। প্রায় ১১ বছর পর মালয়েশিয়ান কোনো প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসতে যাচ্ছেন।

এই সফরে আলোচনার টেবিলে কী থাকছে? কার কার সাথে বৈঠক হবে ? দুই দেশের চাওয়া পাওয়ার কী আছে ? সফরের কূটনৈতিক তাৎপর্যই বা কী? দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শুরুটা কখন থেকে ?

মালয়েশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ এবং এশিয়ার প্রথম মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র যারা ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারী বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।  দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শুরুটা তখন থেকেই।

১৯৭৪ সালে প্রথম মালয়েশিয়া সফরে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একই বছর দেশটির সরকার প্রধান ট্যাংকু আব্দুল হালিম প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করেন। এরপর ১৯৮৩, ১৯৯৩, ও ১৯৯৯  সালে বাংলাদেশে আসেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহম্মদ। আর শেখ হাসিনা ২০০০, ২০১০ ও ২০২১৪ সালে মালয়েশিয়া সফর করেন। আর সবশেষ ২০১৩ সালে মালয় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক ঢাকায় আসেন। অর্থাৎ গত এক দশকের মধ্যে মালয়েশিয়ার কোন সরকার প্রধানই রাষ্ট্রীয় সফর করেনি।

এবার সফরের শুরুটা কীভাবে ?

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গত ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী টেলিফোনে স্বাগত জানান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকে সম্ভাব্য সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এসময় প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। পাশাপাশি দুতাবাসের মাধ্যমে উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পত্রও পাঠানো হয়। এর প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারি সফরে আসছেন।

আর অন্তর্বর্তী সরকারে সময়ে প্রথম বিদেশি কোনো সরকার প্রধানের বাংলাদেশ সফর এটি। ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও আঞ্চলিক সহযোগীতার ক্ষেত্রে এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সফর সঙ্গী কারা আসছেন ঢাকায়?

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী, পরিবহন উপমন্ত্রী, ধর্মবিষয়ক উপমন্ত্রী, দু’জন সংসদ সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ আরও কিছু প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

কার কার বৈঠক? কী থাকছে, আলোচনার টেবিলে?

সফরকালে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম। বৈঠকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি পাঠানো, উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা, ব্যবসা ও বিনিয়োগ, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বিশেষ গুরুত্ব পাবে শ্রমবাজার (?)

মালয়েশিয়া সৌদি আরবের পর একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। বর্তমানে ১২ লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি মালয়শিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু সিন্ডিকেট জটিলতায় শ্রমবাজারটি বন্ধ রয়েছে। গণমাধ্যমের খবর বলছে, নুর আলী ও স্বপনের সিন্ডিকেটের পিছনে সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে অনিয়ম দূর্নীতির কারণে তিনবার বন্ধ হয় শ্রম বাজারটি। প্রথম ২০০৮ সালে  বন্ধ হয়। ৮ বছর পর ২০১৬-তে চালু হয়। ২০১৮ সালে আবার বন্ধ হয়। ২০২২ সালে আবার কর্মী যাওয়া শুরু হলেও ২৪ সালের জুনে আবার বন্ধ করে মালয়েশিয়া, যা এখনো চলমান। আশা করা হচ্ছে, আনোয়ার ইব্রাহীমের এই সফরে সেই জট খুলতে পারে।

দুই দেশের ব্যবসা-বানিজ্যের আকার কেমন ?

মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যের আকার প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে মাত্র ৩৮৪ মিলিয়ন ডলার। বানিজ্য ঘাটতি ব্যাপক। তা কমাতে এফটিএ স্বাক্ষর হয় যাতে শুল্ক মুক্তের সুবিধা পায় তিনশো পণ্য। কিন্তু তাতেও বানিজ্য ঘাটতি কমাতে পারেনি ঢাকা।

আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই সফর কী গুরুত্ব বহন করে ?

২০২৫ সালে মালয়েশিয়া আসিয়ান জোটের সভাপতির দায়িত্ব নেবে। জোটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মালয়েশিয়ার সক্রিয় সহযোগিতার আহ্বান জানানো হবে। এছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আসিয়ানে বাংলাদেশের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার বিষয়টিও বিশেষভাবে তোলা হবে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সরকারি সফরে ঢাকা পৌঁছলে তাকে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল অনুযায়ী উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সফরটি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতা ও স্থায়ী বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে পরিগণিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন