গোটা বিশ্বের মোড়ল মানা হয় আমেরিকাকে। আর ক্ষমতাধর দেশটির ক্ষমতা কাদের হাতে যাবে এটা নিয়েই নির্ঘুম রাত কাটে বেশিরভাগ দেশের। রাত পোহালেই ভোট। মার্কিনদের সমর্থন এবার কোন দিকে যাবে সেটা নিয়েই চলছে আলোচনা সমালোচনা।
বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক রাজনীতির গতিপথ অনেকটাই নির্ভর করে তাদের ওপর। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন শত্রু মিত্র সবার নজরদারি মার্কিন মূলকে। নির্বাচনের ঠিক আগ মহুর্তেও পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে চীন, রাশিয়া, ইরাক ও ইরানের মতো দেশগুলোর বিপক্ষে রয়েছে হস্তক্ষেপের অভিযোগ।
কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে এবার কাকে চায় কোন দেশ? বাংলাদেশেও এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা আর সমীকরণের শেষ নেই। বিশেষ করে হাসিনা সরকার পতনের মাত্র কয়েক মাসের মাথায় আমেরিকার নির্বাচন হওয়ায় হাসিনা ইস্যূতে আমেরিকার অবস্থান কি হতে পারে- সেটা নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই।
বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে বর্তমান শাসন আমলে দুই মেরুতে অবস্থান দুই দেশের। ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকার সময়ও এতোটা শীতল ছিলো না রুশ ইউএসের সম্পর্ক। পুতিন ও ট্রাম্পের সুসম্পর্ক নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পকেই হোয়াইট হাউসে দেখতে চান এই রুশ নেতা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইস্যুতে ইরানের অবস্থান আবার সম্পূর্ণ বিপরীতে। আলোচিত কমান্ডার কাশেম সোলায়মানিকে হত্যার জেরে ট্রাম্পকে শত্রু ঘোষণা করেছিলো ইরান। এবারের নির্বাচনেও ট্রাম্প বিরোধী অবস্থানের রয়েছে ইরান-এমনটাই অভিযোগ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
ডেমোক্রেট কিংবা রিপাবলিক- ক্ষমতায় যারাই থাকুক দু’দলের রয়েছে কঠোর চীন বিরোধী নীতি। ক্ষমতায় থাকাকালীন বিলিয়ন বিলিয়ন শুল্ক আরোপ করে চীনের সাথে বানিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন ট্রাম্প। ক্ষমতার পালা বদলে বাইডেন প্রশাসন বের হয়ে আসেনি সে নীতি থেকে। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প শি জিনপিং এর সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা জানিয়ে বলেন, তিনি খুব চমৎকার মানুষ। আমি আক্রান্ত হয়েছি শোনার পর আমাকে সুন্দর সুন্দর কথা লিখেছেন।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন ইসরায়েলের প্রতি ট্রাম্পের সর্মথন বেশি। নিজেকে তেল আবিবের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন তিনি। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। গাঁজায় আগ্রাসন ইস্যুতে বাইডেন সরকারের অকুণ্ঠ সর্মাথনের পর বলা হচ্ছে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে অখুশি হবেন না নেতানিয়াহু।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সুসম্পর্কের নজির রয়েছে ট্রাম্পের। ক্ষমতায় থাকাকালীন দিল্লি সফরেও এসেছিলেন রিপাবলিকান এই নেতা। তবে বাইডেন জয়ী হওয়ার পর যে কজন বিশ্বনেতা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে শুরুর দিকে ছিলো মোদির নাম। যদিও শিক নেতা হত্যা ইস্যুতে সম্প্রতি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে তৈরি হয়েছে টানাপোড়ন।
অন্যদিকে ইউরোপীয়ান নেতাদের বেশিরভাগই ক্ষমতায় দেখতে চান কমলা হ্যারিসকে। তার কারণ বেশ কয়েকবার ন্যাটো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলো ট্রাম্প। এছাড়া নানা ইস্যুতে ইউরোপীয় নেতাদের সাথে রয়েছে ট্রাম্পের মতবিরোধ।
উপমহাদেশের রাজনীতিতে আমেরিকার রয়েছে ব্যাপক প্রভাব। বাংলাদেশে ক্ষেত্রে এই প্রভাব অনেক বেশি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপর সমার্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তবে নির্বাচনের পর বাংলাদেশ নিয়ে নতুন প্রেসিডেন্টের ভাবনা কী হবে সেটা সময়ই বলে দেবে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, অন্তবর্তী সরকারসহ বিএনপির সমর্থন ডেমোক্রেটদের দিকে আর আওয়ামী লীগের সমর্থকরা চাচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ক্ষমতার মসনদে বসুক।
জানা গেছে, জাপানের অবস্থান ট্রাম্প বিরোধী। কেননা, তারা মনে করছে ট্রাম্প বিজয়ী হলে শুল্ক বাড়াবে এবং জাপানকে সামরিক বাজেট বাড়াতে বলবে। অন্যদিকে কমলা প্রেসিডেন্ট হলে তাদের নীতি ধারাবাহিকভাবে চালু থাকবে। একই ভাবে দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্ট এখন কমলার প্রতি।
সারাবিশ্বের নজর এখন যে নির্বাচনের দিকে, রাত পোহানোর পর থেকেই ধীরে ধীর নিরসন হবে সেই কৌতুহলের। ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা।
এনএ/