29 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

১শ দিনে সরকার: রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংকখাত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিনে দীর্ঘদিন ধরে চলা ডলার–সংকটের আপাত সমাধান হলেও ব্যাংকিং খাতে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, তা দূর করা যায়নি। বেসরকারি ৫-৬টি ব্যাংক থেকে গ্রাহকেরা এখনো চাহিদামতো টাকা তুলতে পারছেন না।

ব্যাংক দখল করে মানুষের জমানো টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আঁতাত করে কিংবা সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা বের করা, বাণিজ্যের ছদ্মবেশে অর্থ পাচার, ঋণখেলাপিদের নানা সুবিধা দেওয়া, টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক টিকিয়ে রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে ধস—ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আর্থিক খাতে ছিল এই চিত্র।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে বেশ কিছু ব্যাংককে ধার দিয়ে আসছিল। নতুন সরকার গঠনের পর টাকা ছাপিয়ে ধার দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। তাদের টাকার জোগান দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এই ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলো চাহিদামতো টাকা ধার পাচ্ছে না।

দেখুন: রাতে দেশে ফিরছেন ড. ইউনূস, এরপর সরকার গঠন

অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট ইনভেস্টোপিডিয়া অনুযায়ী, কোনো দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তারা মুদ্রানীতির নির্ধারণের মধ্য দিয়ে সেটি করে থাকে।

গত ২৮শে অগাস্ট সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে দেয়। দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে এই কমিটি করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

১১ ই সেপ্টেম্বর ব্যাংকখাত সংস্কারে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আর্থিক, পুঁজিবাজার ও ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন খাতের সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে, বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ২০২১ সালের অগাস্টে, ৪৮ বিলিয়ন ডলার। কোভিড মহামারি পরবর্তী সময়ে আমদানি ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলে রিজার্ভ কমতে শুরু করে। এর সঙ্গে নানান উপায়ে অর্থ পাচারকেও বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ হ্রাসের কারণ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

রিজার্ভ ক্রমশ নিম্নমূখী হতে থাকলে পরিস্থিতি সংকটময় হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আইএমএফ নির্ধারিত বিপিএম সিক্স পদ্ধতিতে অগাস্ট রিজার্ভ ছিল প্রায় দুই হাজার ৪৭ কোটি ডলার এবং সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৯৮৬ কোটি ডলার ।

অক্টোবরে বৈদেশিক মুদ্রার এই মজুদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার ৯৮৪ কোটি ডলার। পরিসংখ্যানে কিছুটা কম দেখালেও এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ বেশ কিছু ঋণ ও বকেয়া পাওনা পরিশোধ করে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর স্থানীয় গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে জানান, ওই পাওনা পরিশোধ করতে “রিজার্ভে হাত দিতে হয়নি”।

এই সময়ে রপ্তানি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ দ্রুতই দেশে নিয়ে আসার প্রবণতাও বেড়েছে বলে জানান অর্থনীতিবিদরা।

জাহিদ হোসেন মনে করেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে যে উদ্যোগ থেকে সবচেয়ে বেশি ফলাফল দেখা যাচ্ছে সেটা বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে।”

অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে. মুজেরীও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের সঙ্গে অনেকটাই সঙ্গতিপূর্ণ করা সম্ভব হয়েছে।

এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঠেকানো গেছে বলে মনে করেন তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৪ই নভেম্বরের হালনাগাদ তথ্য বলছে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ১২০ টাকা।

তবে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি তুলে দিয়ে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরো কমে আসতে পারে বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বে পণ্যমূল্য বাড়ে, ফলে দেশে ডলারের সংকট শুরু হয়। যুদ্ধ শুরুর আগে যে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা, খুব দ্রুত তা বেড়ে ১২০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর প্রভাবে বাড়ে জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম। সময়োপযোগী নীতি না নিয়ে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে এই কৌশল সাফল্য আনেনি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন