সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে সেনানিবাসে বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, ও তিন বাহিনীর প্রধানরা। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকাল সোয়া ৮টা নাগাদ, শিখা অনির্বাণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।
সকাল সোয়া ৮টার দিকে শিখা অনির্বাণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। এসময় তাঁকে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অফ অনার প্রদান করেন। একইসাথে বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে শিখা অনির্বাণ চত্বরজুড়ে। প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানগণ শ্রদ্ধা জানান।
এসময়, শিখা অনির্বাণ চত্বরে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এর আগে, সেনানিবাসে পৌঁছালে তিন বাহিনীর প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানান।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস
সশস্ত্র বাহিনী দিবস সাংবার্ষিকভিত্তিতে ২১ নভেম্বর বাংলাদেশে পালন করা হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করে।
অতঃপর ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ-ভারতের সেনাদের নিয়ে গড়া মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর প্রায় তিরানব্বই হাজার সেনা আনুষ্ঠানিকভাবে রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। এ আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ-এর পরিসমাপ্তি ঘটে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সঙ্গে যে কয়েকটি দিবস ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তার মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী দিবস অন্যতম। মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি কর্মকর্তা ও সৈনিকরা অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে কর্মরত প্রায় ২৬ হাজার সুপ্রশিক্ষিত বাঙালি কর্মকর্তা ও সদস্য বিদ্রোহ করেন এবং মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেন। এর মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথমে পাঁচটি এবং পরবর্তী সময়ে নব প্রতিষ্ঠিত আরো তিনটি ব্যাটালিয়ন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
প্রতিবছর ২১ নভেম্বর দেশে দিবসটি মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়। ফজরের পর দেশের সব সেনানিবাস, নৌঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটির মসজিদে দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নতি এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেবেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা স্মারক বিতরণ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী, তিন বাহিনী প্রধান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অসামরিক ও সামরিক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় ঢাকা সেনানিবাসস্থ সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এ সংবর্ধনায় উল্লেখযোগ্য আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন প্রধান বিচারপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, মুখ্য সচিব, বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক প্রধান, সামরিক সাবেক কর্মকর্তা, স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, স্বাধীনতা যুদ্ধের সব বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারী, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তাদের উত্তরাধিকারী, উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তা এবং তিন বাহিনীর কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। বাংলাদেশ টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। দীর্ঘদিন পর এ বছর সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির মোট ২৬ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ঢাকা ছাড়াও বরিশাল, কক্সবাজার, বগুড়া, সিলেট, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর ও খুলনা সেনানিবাস বা ঘাঁটিতে সংশ্লিষ্ট এরিয়া সদর দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। ঢাকা, খুলনা, চাঁদপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনীর জাহাজ বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য নিকটস্থ ঘাঁটিতে রাখা হবে। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বুধবার বাংলাদেশ টেলিভিশন রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর সশস্ত্র বাহিনীর পরিবেশনায় ‘বিশেষ অনির্বাণ’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। বাংলাদেশ বেতার আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘বিশেষ দুর্বার’ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। ‘বিশেষ অনির্বাণ’ অনুষ্ঠানটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে পরে পর্যায়ক্রমে প্রচারিত হবে। আজ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালনাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।