কিন্তু ঠিক কত বয়স থেকে তাদেরকে ডিজিটাল মিডিয়া অর্থাৎ স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত?
আমাদের সকলেরই চেনাজানার মধ্যে কোনো না কোনো শিশু আছে যাদের স্মার্ট ফোনে সোয়াইপ করা বা ইন্টারনেট ব্রাউজ করা দেখে আমরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। কারণ এসব প্রযুক্তির সঙ্গে অভ্যস্ত হতে আমাদের যে পরিমাণ সময় লেগেছিল, এখনকার শিশুরা এর চেয়ে খুব কম সময় নিচ্ছে। কারো কারো এমনও মনে হয় নিশ্চয়ই যে, এরা যখন একটু বড় হয়ে উঠবে তখন আমরা আমাদের চাকরি হারাবো!
কিন্তু প্রযুক্তির প্রতি শিশুদের এই যে আসক্তি এবং এসবে অভ্যস্ততা, শিশুদের জীবনে ও মনে এর প্রভাব নিয়েও আমাদেরকে ভাবতে হবে। আমাদের জানা থাকা দরকার ঠিক কোন বয়সের পর তাদেরকে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুই বছর বয়স হওয়ার পূর্বে কোনো শিশুকে কোনধরনের মনিটর বা স্ক্রিনের কাছে যেতে দেওয়া উচিত না। কিন্তু তারা তাদের মা-বাবার সঙ্গে থাকতে থাকতে টিভি দেখে এবং মা-বাবার অনুপস্থিতিতে তাদের স্মার্টফোনের সান্নিধ্যে চলে আসে শিশুসুলভ কৌতুহল থেকে।
আমাদের কথা বলার ধরণ, শরীরী ভাষা, আবেগ প্রকাশের ভঙ্গি, এসব কেন আমাদের মা-বাবার মতো? কারণ ছোটবেলা থেকে আমরা তাদেরই সান্নিধ্যে থেকে বড় হই এবং তাদের কাছ থেকে এই প্রবণতাগুলো আয়ত্ব করে নেই। এখন, যে শিশু স্মার্টফোনে অন্য কারো ভিডিও দেখে বড় হচ্ছে, তার শরীরী বা বিশেষ করে চেহারার ভাষায় ভিডিওর ওই ব্যক্তির প্রভাব পড়তে পারে।
কিন্তু আমাদের শিশুরা অবশ্যই প্রযুক্তিতে ডুবে নেই, তারা অবশ্যই তাদের মা-বাবা ও প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসতে পারে। কিন্তু যদি শিশুর কাছে তার মা-বাবার চেয়ে ইন্টারনেটে পাওয়া কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীর কথা বলার ধরণ বা শরীরী ভাষা ভাল লেগে যায় তখন কেমন হবে বিষয়টা?
সরাসরি হাতে ধরে অর্থাৎ স্পর্শ শিশুদের জন্য অন্যতম জরুরি ও কার্যকর শেখার মাধ্যম। কাজেই এসব কাজ যখন শিশুরা স্মার্টফোনের কোনো গেমে বা অ্যাপে সোয়াইপ করতে বা ট্যাপ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তখন ওইসব বিষয়ে তাদের যথাযথ শিক্ষা তো হয়ই না, বরং কাজগুলো কিভাবে করতে হয় যেই বিষয়ে ভুল শিক্ষা পায় তারা।
তবে বর্তমান বাস্তবতায় শিশুদেরকে প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখা সম্ভব না, রাখাটা অবাস্তব হবে। বরং প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেওয়ার পাশাপাশি শিশুদের সঙ্গে বাস্তব সান্নিধ্য ও যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।