বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদের বাইরে, বিপুল জনতা মোমবাতি মিছিল ও সমাবেশে সামিল হয়। সে দেশের প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ুলের বিরুদ্ধে এই জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের আরোপিত আকস্মিক ও সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আরোপের ফলে সিউলের রাস্তায় সশস্ত্র সৈন্যরা নেমে আসে। এরপরই তিনি অভিশংসন (ইমপিচমেন্ট) ভোটের মুখে পড়েছেন।
এই ঘটনার পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সরিয়ে দেন।
এদিকে সিউলের রাস্তায় সশস্ত্র সৈন্যরা নেমে আসায় বিরোধী দলগুলি উভয় ব্যক্তিকে অভিশংসন করতে পদক্ষেপ নিয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে সামরিক আইন সংক্রান্ত ঘোষণাকে ঘিরে বুধবার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ুলকে অভিশংসন করতে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও অন্যান্য কয়েকটি ছোট বিরোধী দল একটি সম্মিলিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন প্রায় ছয় ঘন্টা বলবৎ ছিল। কারণ জাতীয় পরিষদ দ্রুত প্রেসিডেন্টের এই আদেশকে ভোট দিয়ে বাতিল করে দেয় এবং তার মন্ত্রিসভাকে বুধবার সকাল হওয়ার আগে এই আইন তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করে।
বিবিসি আরও জানায়, দেশটি এক অস্থির রাত পার করেছে। অনেকে ধারণা করছেন, ঘটনাটি দেশটির প্রেক্ষাপটে এখন পর্যন্ত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। এ ঘটনায় নজর কাড়েন এক নারী যিনি সেনা সদস্যদের মুখোমুখি হয়ে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
সামরিক আইন অর্থাৎ মার্শাল ল’ জারি করায় তা প্রত্যাহারের দাবিতে মাঠে নামেন দেশটির বিরোধী দলীয় নেতাসহ সাধারণ মানুষ। গত মঙ্গলবার রাতে আইন প্রত্যাহারে ভোটের দাবিতে জড়ো হতে শুরু করেন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলের সদস্যরা।
এসময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে এক সৈনিকের অস্ত্র টেনে ধরেন বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মুখপাত্র আহন গুই-রিয়ং (৩৫)। ওই ঘটনার ভিডিও তখনই অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আহন গুই-রিয়ং বলেন, “আমি কিছু ভাবিনি। আমি শুধু জানতাম যে আমাদের এটি থামাতেই হবে।”
প্রেসিডেন্ট দেশজুড়ে সামরিক আইন জারি করলে জাতীয় পরিষদে অবস্থান নেয় সামরিক বাহিনী। এ সামরিক আইনের ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবিতেই সেখানে রওনা হন আহন।
দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণ প্রজন্মের অনেকের মতো ‘মার্শাল ল’ শব্দটি আহনের জন্যও অপরিচিত ছিল। এটি সর্বশেষ ঐ দেশে ১৯৭৯ সালে ঘোষণা করা হয়েছিল।
সামরিক আইন ঘোষণা করলে রাজনৈতিক কার্যক্রম, যেমন সমাবেশ ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ হয়ে যায়, ধর্মঘট ও শ্রমিক আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায় এবং গণমাধ্যম ও প্রকাশনার কার্যক্রম সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আইন অমান্যকারীদের ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার বা আটক করা হতে পারে।
সামরিক আইন ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিরোধী নেতা লি জে-মিয়ং নেতাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে জড়ো হতে এবং ওই ঘোষণা প্রত্যাহারের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
রাত ১টার দিকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সামরিক আইন প্রত্যাহারের পক্ষে একটি প্রস্তাব পাস করে। উপস্থিত ১৯০ জন সদস্য সবাই এটি বাতিলের পক্ষে ভোট দেন। ভোর ৪টা ২৬ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ইউন তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।