21 C
Dhaka
শুক্রবার, জানুয়ারি ১০, ২০২৫

শতাধিক পণ্য-সেবায় শুল্ক ও কর বাড়িয়ে অধ্যাদেশ

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। তাতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরেক দফা বেড়ে যেতে পারে সাধারণ মানুষের।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাতে এ সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫। এতে বাড়ছে শতাধিক পণ্য ও সেবার ব্যয়।

এই দুটি অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এর ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে। বেড়েছে শতাধিক পণ্য ও সেবার খরচ।

রেস্তোরাঁর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে বন্ধ করে দেওয়া হবে খাবার রেস্তোরাঁ। বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এমন হুঁশিয়ারি দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইনে ব্যাপক পরিবর্তন এনে অধ্যাদেশ জারি করে জানিয়ে দেয়া হয় শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পাকা করেছে সরকার। রেস্তোরাঁতেও থাকছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।

এতে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে।

প্রথমবারের মতো ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে ব্রডব্যান্ড সেবায়।

৬৩ পণ্য ও সেবায় সরাসরি কর বাড়লেও এর প্রভাব পড়বে শতাধিক পণ্য ও সেবায়।

আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ল যেসব পণ্যে

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিগারেট, আম, কমলালেবু, আঙ্গুর, পেঁপে, তরমুজ, আপেল ও নাশপাতি, ফলের রস, সাবান ও সাবান জাতীয় পণ্য, ডিটারজেন্ট, ফ্রুট ড্রিংকসের ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকসের সম্পূরক শুল্ক ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বাদাম আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ঠেকানো হয়েছে ৪৫ শতাংশে।

নতুন আইনে ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে বিস্কুট, আচার, চাটনি, টমেটো কেচাপ, এলপি গ্যাস, বিআরটিএ থেকে নেওয়া লেমিনেটেড ড্রাইভিং লাইসেন্স, চশমার ফ্রেম, রিডিং গ্লাসের ভ্যাট।

দেশি যেসব পণ্যে ভ্যাট বাড়ল

টিস্যু, সানগ্লাস, মিষ্টি, প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা, নিজস্ব ব্রান্ডের তৈরি পোশাকের ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এলপি গ্যাসের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ২ শতাংশ বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি, মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, ডক ইয়ার্ড, ছাপাখানা, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচিত্র প্রদর্শনী (সিনেমা হল), চলচ্চিত্র পরিবেশক, মেরামত ও সার্ভিসিং, স্বয়ংক্রিয় বা যন্ত্রচালিত করাতকল, খেলাধুলা আয়োজক, পরিবহন ঠিকাদার, বোর্ড সভায় পণ্য যোগানদাতা, টেইলারিং শপ ও টেইলার্স, ভবন রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, সামাজিক ও খেলাধুলা বিষয়ক ক্লাবে সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এদিকে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেন ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা হলেই টার্নওভার কর দিতে হবে। বর্তমানে ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারে কর দিতে হয়।

নতুন প্রস্তাবে, বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকা পার হলে পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসবে। আমদানি পর্যায়ে ফলের রসে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ; তামাকে ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ; সুপারিতে ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বিমানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রুটে আবগারি শুল্ক ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা ও সার্কভুক্ত দেশে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ হাজার টাকা। এছাড়া এশিয়ার দেশগুলোতে দুই হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে তিন হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করা হচ্ছে।

সিগারেটের দাম ও কর বেড়েছে

সিগারেটের চারটি স্তরে দাম ও শুল্ক-দুটোই বাড়ানো হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটেও একইভাবে বাড়ানো হয়েছিল। এর আগে কখনও একই সঙ্গে চার স্তরের দাম ও শুল্ক-কর বাড়ানোর নজির ছিল না।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। এতে প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।

এছাড়া মধ্যমস্তরে ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ; উচ্চস্তরে ১২০ থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ এবং অতি উচ্চস্তরের দাম ১৬০ থেকে ১৮৫ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। লাইম স্টোন ও ডলোমাইটে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে।

এতদিন সিগারেটের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক নিম্নস্তরে অন্য তিন স্তরের তুলনায় কম রাখা হত। এবারই প্রথম সম্পূরক শুল্ক একক হারে নেওয়া হল।

এ খাত থেকে এই দাম ও কর বৃদ্ধির মাধ্যমে চলতি অর্থবছরের বাকি দিনগুলোতে ৪ হাজার কোটি বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য এনবিআরের। তাই বাড়লো শতাধিক পন্য ও সেবায় কর।

দেখুন: হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ, ৩ দেশের স্যাংশনে হাসিনাসহ দুই শতাধিক বাংলাদেশী?

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন