জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য (এনবিআর) ড. মোঃ সহিদুল ইসলাম বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক ব্যাবহারে কর ও কার্যকর মূল্য বৃদ্ধির দাবি তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি। তবে বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য এবং তামাককর কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ। এতে করে তরুণ ছেলে মেয়েদের তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা যাচ্ছেনা। তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এসময় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সব ধরনের সিগারেটের দাম বৃদ্ধি, নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক খুচরা মূল্যের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ করা এবং সিগারেটে বহুস্তর বিশিষ্ট আ্যডভ্যালোরেম কর পদ্ধতির পরিবর্তে ইউনিফর্ম স্পেসিফিক বা মিক্সড (স্পেসিফিক ও আ্যডভ্যালোরেম) কর পদ্ধতি প্রচলনের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে, পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকেও এর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, আরিফ আহমেদ বলেন, সুস্থ-সমৃদ্ধ দেশের জন্য ধূমপানমুক্ত সমাজ দরকার। আজকের তরুণরাই আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে তামাকপণ্যের কর এবং দাম বৃদ্ধি করার কোন বিকল্প নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, তামাক সেবনের ফলে প্রতিবছর ৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে।এর মধ্যে সরাসরি তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যায় ৭১ লক্ষ মানুষ এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যায় প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ।

অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৩-১৫ বছরের শিশুদের মধ্যে (গ্লোবাল ইয়ুথ ট্যোবাকো সার্ভে-২০১৩) শতকরা ৬.৯% কোন না কোন ধরনের তামাক ব্যাবহার করে, তাদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা শতকরা ৯.২% এবং মেয়েদের সংখ্যা শতকরা ২.৮%। আমাদের লক্ষ্যে হতে হবে এই শতকরার পরিমান শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। তামাকপণ্যের অতিরিক্ত কর বাড়িয়ে এই লক্ষ্যে আমরা অচিরেই পৌছাতে পারি। তাই আমি বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকপণ্যের উপর অতিরিক্ত কর বর্ধিত করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য।
এন্টি টোব্যাকো ক্লাবের ইয়ুথ লিডার, গোলাম মোরশেদ বলেন, তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ধরনের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেড়ে যায়। তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে এবং আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখতে তামাকপণ্যের কর বৃদ্ধি এবং এর দাম বৃদ্ধি করার কোন বিকল্প পথ আমাদের হাতে খোলা নেই।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এন্টি টোব্যাকো ক্লাবের সদস্যবৃন্দ এবং ডাঃ বরিষা পাল প্রোজেক্ট কো-অরডিনেটর, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং গণমাধ্যমকর্মী।
এনএ/