মঙ্গেলিয়ান পশুপালনকারীরা কয়েকমাস ধরে তীব্র শীতের অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। মঙ্গোলিয়ার জরুরি কার্যক্রম কেন্দ্র-ইওসি থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিকূল এ আবহাওয়ার কারণে দেশটিতে ৪৭ লাখ গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা রেড ক্রসের কাছে প্রাণীরক্ষায় সহায়তা চেয়েছে দেশটি। কমপক্ষে ২ হাজার ২৫০ পরিবার তাদের ৭০ শতাংশ গবাদী প্রাণী হারিয়েছে। তীব্র তুষারপাত এবং বরফে ঘাসযুক্ত ভূমি ঢাকা পড়ে গেছে।
রেড ক্রস জানিয়েছে, আরও অনেক প্রাণীর টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। দেশটির ৩৩ লাখ মানুষ যাযাবর পশুপালক। এসব মানুষের বসতি ঘাষযুক্ত কম গাছের অস্তিত্ব থাকা বিশাল উন্মুক্ত এলাকার তাবুজাতীয় ঘর। রেডক্রসের পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধি দলের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গবাদী পশু মৃত্যুর কারণে পশুপালনকারীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তীব্র তৃষারপাতে ১ হাজারের বেশি তাবুঘর ঢাকা পড়েছে। সাধারণত শীত সহ্য করতে অভ্যস্ত হলেও আবহাওয়ায় এই চরম অবস্থাকে দুর্যোগ মনে করা হয় দেশটিতে। এসময় দেশটির কোথাও কোথাও তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে।এ বছর কয়েকটি তুষারঝড়ও হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, মঙ্গোলিয়ার এই আবহাওয়ার নেতিবাচক পরিবেশটাও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গত এক দশকে দেশটি এমন আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়েছে ৬ বার।
২০২৩ সালে একই ধরণের শীতের কারণে দেশটিতে ৪৪ লাখ গবাদী পশুর মৃত্যু হয়, যার ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। গত গ্রীষ্মকালের খরার কারণেও গবাদী পশুদের বাড়তি খাবার দিয়ে আসন্ন শীত মোকাবিলায় যথেষ্ট প্রস্তুত করাও সম্ভব হয়নি।
জলবায়ুর পরিবর্তন মঙ্গোলিয়ার চার ঋতুকেন্দ্রিক চক্রকেও ব্যহত করেছে। যে কারণে, বারবার খরা এবং তীব্র ঠান্ডার কবলে পড়ছে দেশটি। ২০১৫ সাল থেকে মঙ্গোলিয়ায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করা টপন মিশরা একথা জানিয়েছেন। ঘাসযুক্ত জমি বরফে ঢাকা পড়ায় নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগেই গবাদী পশুর জন্য সংরক্ষিত করে রাখা খাবারও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
রেড ক্রসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত মঙ্গোলিয়ায় গবাদী পশুর সংখ্যা ছিলো ৬ কোটি ৪০ লাখ ৭০ হাজার। দেশটিতে ভেড়া, গরু, ঘোড়া, ছাগল, উটসহ আরও কিছু প্রাণী পালিত হয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা। এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে দেশটির সবথেকে ধান্ডা অঞ্চলে তীব্র শীতেও টিকে থাকতে পারে এমন বায়াদ ভেড়া।
শত শত বছর ধরে বাছাইকরা প্রজাতির এই ভেড়া দেশটির মানুষদের জন্য দুধ, মাংস এবং পশমের যোগান দিয়ে আসছে। গবাদী পশু কমতে থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে দেশটির অধিবাসীদের জীবিকাও।