কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে দুই কৃষকের ৭০ শতাংশ জমির চিচিঙ্গা গাছের গোড়া কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে অসহায় দুই কৃষক। বিগত ১০ বছর ধরে এই গ্রামে কোন না কোন কৃষক এমন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। দুর্বৃত্তদের এমন প্রবণতা বন্ধ করতে না পারলে কৃষিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন এখানকার কৃষকেরা।
গত ৭ মার্চ (শুক্রবার) দিবাগত রাতে উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের সাগুলী গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা হলেন আল কারী ও হীরা মিয়া। তারা সাগুলী গ্রামের বাসিন্দা। আলকারী চাষাবাদ করেছিলেন ৪০ শতাংশ আর হীরা মিয়া চাষাবাদ করেছিলেন ৩০ শতাংশ জমিতে। দুজনই নিম্নআয়ের মানুষ। এই ফসলের উপর নির্ভর করে সারাবছর চলতে হয় তাদের।
আল কারী জানান, সাগুলী গ্রামের শামসুদ্দিন মাস্টারের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ৪০ শতাংশ জমি পত্তন নিয়ে চিচিঙ্গা চাষাবাদ করেছেন তিনি। এতে দেড় লাখের মতো খরচ হয়েছে তার। ফলনও ভালো হয়েছিল । চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা যে চিচিঙ্গা বিক্রি হতো, সেখানে শূন্য হাতে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই কৃষক আল কারীর।
আল কারীর অভিযোগ, একই গ্রামের কাঞ্চন মিয়া নামে একজনও জমিটা মালিকের কাছ থেকে পত্তন নিতে চেয়েছিলো। আলকারীর ধারণা জমিটা পত্তন নিতে না পেরে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে কাঞ্চন এমনটা করে থাকতে পারে।
একই গ্রামের কৃষক হীরা মিয়া জানান, দিনরাত পরিশ্রমের পর খেতে ফলন আসতেও শুরু করে। কিন্তুু কিছুদিন পূর্বে ভোরবেলায় জমিতে এসে দেখেন সব শেষ। তিনি বলেন, ঋণ করে জমি পত্তন ও চাষাবাদ করেছিলাম। এখন লাভ তো দূরে থাক, কীভাবে দেনা শোধ করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত তিনি। এত যত্নে গড়ে তোলা সবজির বাগান এভাবে নষ্ট করে ফেলায় হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন হীরা মিয়া।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত মো: কাঞ্চন মিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয়রা জানান, গত ১০ বছরের মধ্যে প্রতিবছরই এলাকার কোনো না কোনো কৃষকের জমির সবজি এভাবে নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি তারা। এমন ঘটনায় এলাকাবাসীও হতভম্ব। তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষাই পাচ্ছেননা তারা। প্রশাসনের কাছে অপরাধীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির দাবি তাদের।
ইসলামী আন্দোলনের কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি প্রভাষক মুফতি আলমগীর হোসাইন তালুকদার বলেন, এসব কৃষকেরা ঋণ করে জমি পত্তন নিয়ে সবজি চাষ করেছিলেন। এখন ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, সারাবছর কিভাবে চলবেন, সে চিন্তায় অস্থির তারা। তিনি বলেন, দুর্বৃত্তদের এমন প্রবণতা বন্ধ করতে না পারলে কৃষিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন এখানকার কৃষকেরা। সে কারণে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহবুব মোরশেদ বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তিনি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এনএ/