কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগামীকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়ে শপথ নেবেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি। বুধবার (১২ মার্চ) কানাডার গভর্নর জেনারেলের কার্যালয় এ ঘোষণা দিয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রায় ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর, গত জানুয়ারিতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন জাস্টিন ট্রুডো। উদারপন্থী নেতা মার্ক কার্নি ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন এবং তিনি ‘নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রুত’ পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
৫৯ বছর বয়সী মার্ক কার্নি রাজনীতিতে নবীন। তবে তিনি বিপুল ভোটে কানাডার ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। দলের দেড় লাখের বেশি সদস্যের মধ্যে ৮৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন কার্নি। এর আগে তিনি ব্যাংক অব কানাডা এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কার্নি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন এমন একটি সময়ে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে দেশটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
ট্রুডোর পদত্যাগের পর, কার্নি নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তিনি দেশটির বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য পরিস্থিতি বর্তমানে সংকটময়। ট্রাম্প প্রশাসন, কানাডায় ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর জবাবে, কানাডা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।
জয়ের পর, সমর্থকদের উদ্দেশে এক ভাষণে কার্নি বলেন, “হকির মতো বাণিজ্যেও জিতবে কানাডা।” তিনি আরও বলেন, “আমি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নতুন করে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।” তার এই মন্তব্য কানাডার বাণিজ্য নিয়ে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, দু’দেশের মধ্যে এই নতুন চুক্তি বাণিজ্য সম্পর্কের সংকট নিরসন করবে।
কার্নি তার সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে দ্রুত ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ থাকবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করা। বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি এবং তার বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, কার্নি কানাডার রাজনীতিতে আসার আগে, বিশেষ করে ব্যাংক অব কানাডা এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তার মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক বিষয়ক গভীর অভিজ্ঞতা রয়েছে। কার্নির নেতৃত্বে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির ওপর তার ভূমিকা এবং কার্যক্রম কেমন হবে, তা নজরদারিতে রাখা হবে।
এটি সঠিক সময়ে আসছে, যখন কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের পর, অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, কার্নি আমলে এক নতুন বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক পুনরায় সঠিক পথে ফিরে আসতে পারে। এর মাধ্যমে কানাডা আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে তার শক্তিশালী অর্থনৈতিক পটভূমি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য।

সব মিলিয়ে, কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মার্ক কার্নির শপথ গ্রহণের পর, তার নেতৃত্বে দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তিত হতে পারে, এবং এটি কানাডার ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে যাচ্ছে।
পড়ুন : কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন মার্ক কার্নি
দেখুন : কানাডার দায়িত্ব নিয়েই ট্রাম্পকে টক্কর দিতে চান মার্ক কার্নি |
ইম/