বাদুড়ের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কোটি টাকার সম্পত্তি। অসংখ্য বাদুড় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চিঁ চিঁ শব্দে মুখরিত করে রাখে। দূর থেকে শব্দ শুনে স্পষ্টই বোঝা যায় কাছাকাছি কোথাও অভয়ারণ্য রয়েছে বাদুড়দের। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পাশে ওয়াপদাপাড়ায় বাদুড়দের ২০০ বছরের পুরনো নিজস্ব সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন বাদুড় দেখতে। চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্র পৌরসভা সংলগ্ন এক সময়ের জোয়ার্দ্দার পাড়া যা বর্তমানে বাদুরতলা নামেই পরিচিত।
দিনের বেলা বাদুড়গুলো ৪টি তেঁতুল গাছের ডালে ঝুলে থাকে। এ ডাল থেকে ও ডালে ছুটে বেড়ায় তারা। সন্ধ্যা হলে খাবারের জন্য বেরিয়ে পড়ে। এখানে বসবাস ছিল জোয়ার্দ্দার ও মল্লিক বংশের লোকজনের। ইবাদত আলি জোয়ার্দ্দারের সব সম্পত্তি তার বড় ছেলে ইউসুফ আলি জোয়ার্দ্দার দেখাশুনা করতো। ইউসুফ আলি জোয়ার্দ্দার মারা যাওয়ার পর তার দুই মেয়ে ৪ বিঘা জমি ভাগ করে নেয়। সেসময় ১০টি তেতুল গাছসহ বিভিন প্রজাতির গাছ ছিল।
আর এই তেতুল গাছগুলোতেই বাদুড়দের বসবাস। এখানে ইউসুফ আলি জোয়ার্দ্দারের বড় মেয়ে সেলিমা খাতুনের ৬ ছেলের মধ্যে কয়েক ছেলের রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসবাসের বাড়ি। আর তার মেজো ছেলের জমির মধ্যে পড়েছে বর্তমানে টিকে থাকা ৪টি তেঁতুল গাছ। আর এই গাছগুলোই এখন বাদুড়ের নিরাপদ আশ্রয়। সে কথা চিন্তা করেই গাছ চারটি না কেটে প্রায় দুই কোটি টাকা মুল্যের ৩ কাঠা জমি ছেড়ে দেয় জোয়ার্দ্দার পরিবার।
বর্তমানে এ জমির মূল্য এক কোটি টাকারও বেশি। চারটি তেঁতুল গাছে প্রায় ৩ হাজার বাদুড় বসবাস করে। তেঁতুল গাছ থেকে তেঁতুল পাড়া হয়না, শুধু তাদের খাবারের জন্য রাখা হয়। গাছের ডালে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পা ডালের সাথে আটকে মাথা নিচের দিকে দিয়ে ঝুলে থাকে এসব বাদুড়।
দিনের বেলা স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলো চোখে দেখতে না পারায় গাছের ডালে ঝুলে থাকে। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে বাদুড় গুলো খাবারের জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় দূর-দূরান্তে। খাবার খেয়ে ভোরের আলো ফুটার আগেই ফিরে আসে নীড়ে।
বাদুড়ের নামে বাদুড় মার্কা আটা, ময়দা, সুজি ও ভুসিরও নামকরণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার বাজারে বাদুড় মার্কা পণ্যগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বিলুপ্ত এ প্রাণীটি দেখতে দুর-দুরন্ত থেকে সব বয়সের মানুষ ছুটে আসেন। বাদুড়ের অবাধ বিচরণ দেখে তারা মুগ্ধ হন। কারও ধারণা বাদুড় নিপাই ভাইরাস ছড়ায়। কিন্তু যারা বাদুড়ের সাথেই বসবাস করেন তাদের বিশ্বাস, এখনও পর্যন্ত বাদুড় থেকে কোন ভাইরাস ও রোগ ছড়ায়নি। স্থানীয়দের দাবি, বিলুপ্ত প্রায় এ প্রাণীগুলো এখনই সংরক্ষণ করা না গেলে হারিয়ে যাবে।