33 C
Dhaka
শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

হিন্দু হয়েও আমাদের ২০০ বছর ধরে এই মন্দিরে পুজো দিতে দেওয়া হত না

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার হিন্দু গীধগ্রামে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের মন্দিরে পুজো দেওয়ার অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিনের বৈষম্যের অবসান ঘটল। ২০০ বছর ধরে এই সম্প্রদায়কে ওই শিব মন্দিরে পুজো দিতে দেওয়া হয়নি। তবে বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫ তারিখে, প্রথমবারের মতো মন্দিরে পুজো দিতে সমর্থ হন পাঁচজন দলিত নারী। তাদের দাবি, দীর্ঘকাল ধরে এই মন্দিরে তাদের পুজো দেওয়ার অনুমতি ছিল না, যা তাঁদের ধর্মীয় অধিকার হরণ করেছিল।

গ্রামের মানুষরা জানান, অন্য মন্দিরগুলোতে দাস সম্প্রদায়ের লোকেরা পুজো দিতে পারতেন, তবে গীধেশ্বর শিব মন্দিরে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এতে ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে তাঁদের অবমাননা করা হত। এক মহিলা, পূজা দাস, বলেন, “আমাদের ঠাকুমা-দিদিমারা বলেছেন যে ২০০ বছর ধরে আমরা এই মন্দিরে পুজো দিতে পারিনি। হিন্দু হয়েও কেন আমরা মন্দিরে পুজো দিতে পারব না?”

এতদিন ধরে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে স্থানীয় দলিত সম্প্রদায় প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল। গত কয়েকদিন ধরে তারা পুজো দেওয়ার দাবিতে মিছিল ও সভা করছিলেন। অবশেষে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ তাদের সাহায্যে মন্দিরে পুজো দিতে নিয়ে যায়। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে, গ্রামবাসীরা তাঁদের ধর্মীয় অধিকার পেয়েছেন। তবে, এই ঘটনায় এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং পুলিশ সেখানে মোতায়েন রাখা হয়েছে।

গ্রামের প্রশাসক, অহিংসা জৈন, জানিয়েছেন, “এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না যে, দলিত সম্প্রদায়কে মন্দিরে পুজো দেওয়ার অনুমতি না দেওয়া হয়। আমরা বিষয়টি জানার পরেই পদক্ষেপ নেন।” তিনি আরও জানান, প্রশাসন সকলকে বোঝানোর পর, দলিত সম্প্রদায়ের সদস্যরা পুজো দেওয়ার অধিকার পেয়েছেন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা হয়েছে।

গীধগ্রামের এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর মধ্যে জাতিগত বৈষম্যের প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে জাতিগত বৈষম্য ও দলিত সম্প্রদায়কে অবহেলার ঘটনা খুব বেশি সামনে আসেনি, তবে এই ঘটনা তার ব্যতিক্রম। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে জাতিগত সমীকরণের প্রভাব বাড়ছে এবং এটি ভবিষ্যতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

স্থানীয় সমাজ কর্মী তমাল মাজি জানিয়েছেন, “অন্য দলিত সম্প্রদায়ের লোকেরা, যারা আগে থেকেই মন্দিরে পুজো দেওয়ার অধিকার পেয়েছেন, তারা মনে করতেন যে, নতুন করে কেন অন্য দলিত সম্প্রদায় এই অধিকার দাবি করবে। কিন্তু কেন বৈষম্য থাকবে? কেন অস্পৃশ্যতা থাকবে?”

এদিকে, হিন্দু প্রশাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,

এই ধরনের বিভেদ ও বৈষম্য কোনোভাবেই চলে না। তাদের কথা অনুযায়ী, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার রয়েছে, এবং এ ধরনের আচরণ আইনের পরিপন্থী। তবে, এখনও পুলিশ সেখানে মোতায়েন আছে, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়।

এমন ঘটনা যে পশ্চিমবঙ্গে পুরোপুরি অস্বীকারযোগ্য, তা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। প্রশাসন ও সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই বৈষম্য দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

পড়ুন: হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মিথ্যা তথ্য চড়াচ্ছে: প্রেস সচিব

দেখুন: যে কারণে ৬০ বছর ধরে মসজিদ চালাচ্ছেন হিন্দু পরিবার | 

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন