22 C
Dhaka
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪
বিজ্ঞাপন

ঘোরির ভারত দখল এবং মুসলিম শাসনামলের সূচনা

১২ শতকের মধ্যভাগে ভারতীয় উপমহাদেশে এক নতুন যুগের সূচনা হয়, যা পরবর্তীতে অঞ্চলটির ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলে। এই যুগের সূচনা ঘটে তূর্কী বংশধর শাহাবুদ্দিন ঘোরির হাত ধরে। ঘোরির সুলতান শাহাবুদ্দিন মুহাম্মদ ঘোরি তার সামরিক শক্তি এবং ক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। নিজের সাম্রাজ্য বিস্তারের অভিপ্রায়ে তিনি দৃষ্টি ফেলেন ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে এবং এখানেই শুরু হয় মুসলিম শাসনামলের নতুন অধ্যায়।

ঘোরি সাম্রাজ্যের প্রেক্ষাপট

ঘোরি সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে বর্তমান আফগানিস্তানের ঘোর অঞ্চলে। শাহাবুদ্দিন ঘোরি এবং তার ভাই ঘিয়াসউদ্দিন ঘোরি মিলে এই সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। ঘিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর পর শাহাবুদ্দিন তার শক্তি ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং নিজের সাম্রাজ্যকে বিস্তৃত করেন।

ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন

ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের সূচনা শাহাবুদ্দিন ঘোরির হাত ধরেই ঘটে। তার প্রধান লক্ষ্য ছিল উত্তর ভারতের রাজ্যসমূহ। প্রথমে তিনি ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রিথ্বীরাজ চৌহানের নেতৃত্বাধীন রাজপুতদের কাছে পরাজিত হন। কিন্তু শাহাবুদ্দিন সহজে হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না। পরের বছর, ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে, তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে তিনি আবার প্রিথ্বীরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং এবার রাজপুতদের পরাজিত করেন। এই বিজয় তাকে দিল্লি ও উত্তর ভারতের বিশাল অঞ্চল দখলের সুযোগ করে দেয়।

মুসলিম শাসনামলের সূচনা

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে জয়লাভের পর, শাহাবুদ্দিন ঘোরি তার সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবেককে ভারতের শাসন ভার অর্পণ করেন। কুতুবউদ্দিন আইবেক দিল্লিতে ঘোরি সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে দিল্লি সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে। কুতুবউদ্দিন আইবেক পরবর্তীতে নিজেই সুলতান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন এবং দিল্লিতে কুতুব মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু করেন, যা আজও মুসলিম শাসনামলের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে বিদ্যমান।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

শাহাবুদ্দিন ঘোরির ভারত দখল এবং মুসলিম শাসনামলের সূচনা ভারতীয় উপমহাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গভীর প্রভাব ফেলে। মুসলিম শাসকরা ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে নিজেদের সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে এক নতুন সংস্কৃতির জন্ম দেয়। স্থাপত্য, সাহিত্য, এবং সংগীতের ক্ষেত্রে এই যুগের প্রভাব এখনও বর্তমান। মুসলিম শাসকদের আগমনে ভারতীয় উপমহাদেশে নতুন ধরনের শাসনব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, এবং রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটে যা ভারতীয় ইতিহাসের ধারাকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করে।

শাহাবুদ্দিন ঘোরির এই অভিযান শুধুমাত্র সামরিক বিজয় নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের সূচনা ছিল যা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

যদিও দিল্লি সুলতানাতের ইতিহাস ১২০৬ থেকে ১৫২৬ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবুও এই সময়কালের নথিভুক্ত ভিডিওগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্বেষণ করা হয়নি। এই যুগের আকর্ষণীয় বর্ণনাগুলি জানতে, ডয়েচে ভেলের তৈরি ডকুমেন্টারিগুলি নাগরিক টিভি ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যেতে পারে। এই উৎসগুলি সুলতানি আমলের কম পরিচিত কিন্তু মনোমুগ্ধকর দিকগুলি উন্মোচিত করে, যা ব্যক্তিবর্গ, ঘটনাবলী এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা ভারতের ইতিহাসে অমোচনীয় ছাপ রেখে গেছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন