16 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

মালয়েশিয়ায় র্কমী পাঠাতে অনিয়ম হয়নি: বায়রা

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)। মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা।  

তাদের দাবি, ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম হয়নি। বায়রার সেক্রেটারি জেনারেল আলী হায়দার চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মালয়েশিয়া সরকার নির্ধারিত সময়ের পরও ভিসা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে এবং শেষ মুহূর্তে শ্রমিক পাঠানো যাবে না জেনেও আমাদের মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র দিয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের জন্য ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি, কারণ ৩১ মে’র সময়সীমার পরেও ই-ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ৩১ মে সময়সীমা শেষ হয়েছে, তারপরও ২ জুন ই-ভিসা দেওয়া হয়েছে, যা একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি।

ব্রিফিংয়ে বায়রার সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপন বলেন, বিএমইটি সনদধারী ২-৩ শতাংশ শ্রমিক তাদের গন্তব্য দেশে যেতে না পারা সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, অসদাচরণের জন্য কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করা বা টিকিটের অভাবে এমনটা হতে পারে। মালয়েশিয়ায় যেতে পারছেন না এমন ১৬ হাজার ৯৭০ জন শ্রমিকের প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাবের বিষয়ে তিনি বলেন, এই সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় হাজারের বেশি নয়। তিনি আরও বলেন, তাদের মালয়েশিয়ায় পাঠাতে বা তাদের অর্থ ফেরত দিতে তারা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন।

তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ২০২২ সালে সিন্ডিকেটে যোগ দেওয়ার আগে ৩০০ জনেরও বেশি লোকের তুলনায় এবার ৮ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি লোক পাঠানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মধ্যে কোনও সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি কাউকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো বা ভিসা প্রসেসের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমি শুধু পুরো প্রক্রিয়াটি সহজতর করেছি। 

তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া সরকার কাকতালীয়ভাবে সেদেশে কর্মী পাঠানোর জন্য পুনরায় এজেন্সিগুলোকে নিয়োগ দিয়েছে। কোনও ক্ষতিগ্রস্তকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব না হলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

তিনি দাবি করেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের (রিক্রুটিং এজেন্সির) বদনাম করার চেষ্টা করছে।

কয়েকটি গণমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখার কোনও সুযোগ নেই। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ছিল এবং ১০১টি এজেন্সি এই সিস্টেমের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকার এবং বায়রার নেতৃত্বস্থানীয় সদস্যগণের দীর্ঘ দিনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারটি ২০২২ সালের আগষ্ট মাসে বাংলাদেশীদের জন্য উন্মুক্ত হয়।

মালয়েশিয়া সরকার দুদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ মিটিং এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক সীমিত সংখ্যক ১০১টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অনলাইন বেস অটো অ্যালোকেশন সিষ্টেম এর মাধ্যমে এজেন্সি সমূহের জন্য মালয়েশিয়া সরকার কোটা বরাদ্দ করে।

২০২২ সালের আগষ্ট মাস হতে ৩১ মে, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ২২ মাসে প্রায় পৌনে পাঁচ লক্ষ কর্মী মালয়েশিয়া গমন করেছেন। তাদের প্রায় সকলেই ভালো আছেন এবং নিয়মিত কাজ ও বেতন পাচ্ছেন। উল্লেখ্য যে, মালয়েশিয়ায় কর্মীদের ন্যূনতম মূল বেতন ১৫০০ রিঙ্গিত, এর সাথে ওভারটাইম ও অন্যান্য ভাতা মিলে একজন কর্মী মাসে কমবেশি পঞ্চাশ হাজার টাকা পান। 

এই ধাপে মালয়েশিয়ায় গমনকারী পৌনে পাঁচ লক্ষ কর্মীর মধ্যে সামান্য যে কিছু কর্মী (যাদের সংখ্যা মোট কর্মীর ১% এর বেশি নয়) কর্মস্থলে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন, তাদেরকে মালয়েশিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় টাস্ক ফোর্স গঠন করে অন্য কোম্পানিতে কাজের ব্যাবস্থ করেছে। কর্মীদের চুক্তি মোতাবেক কাজ ও বেতন-ভাতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকার নিয়োগকারীদেরকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে।

বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং রিক্রুটিং এজেন্সি সমূহ যৌথভাবে কর্মীদের কর্মসংস্থান, বেতন-ভাতা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মালয়েশিয়া সরকার সেক্টর ভিত্তিক কর্মী চাহিদা নিরূপণ এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় সেক্টরে কর্মী নিয়োগের লক্ষে বর্তমান ধাপের কোটা প্রাপ্ত বাংলাদেশ সহ সকল ১৪টি সোর্স কান্ট্রির কর্মীদেরকে ৩১ মে, ২০২৪ তারিখের মধ্যে মালয়েশিয়ায় গমনের সময়সীমা নির্ধারণ করে। আমাদের কর্মীদের মধ্যে যারা সময়মত ই-ভিসা ও বিএমইটি’র ছাড়পত্র পেয়েছেন তাদের প্রায় সকলেই ৩১ মে, ২০২৪ তারিখের মধ্যে মালয়েশিয়ায় গমন করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে একেবারে শেষ মূহুর্তে এমনকি ৩০ মে, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত যে সকল কর্মীর ই-ভিসা এবং বিএমইটি’র ছাড়পত্র পেয়েছেন তারা বিমান টিকেট এর স্বল্পতার কারণে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। এদের সংখ্যা সর্বসাকূল্যে ৫/৬ হাজারের বেশি হবেনা। ঐ সকল কর্মীদের জন্য পার্শ্ববর্তীদেশ সমূহ এমনকি দুবাই, কাতার, চীন পর্যন্ত হয়ে চড়া দামে টিকেট সংগ্রহ করে নির্ধারিত সময়ে মালয়েশিয়া পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। 

তবে দুঃখের বিষয় যে, বর্তমান ধাপে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরনকারী এমনকি ১০১টি প্যানেল বিআরএ’র অন্তর্ভূক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির কিছু সদস্য তাদের স্বার্থ চারিতার্থ করার লক্ষে মিডিয়ায় অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। মিডিয়াকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভিন্নভাবে লবিং করে দেশের জন্য ক্ষতিকর সব মিথ্যা রিপোর্ট প্রচারের ব্যবস্থা করছেন। ৩০ মে, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকার ই-ভিসা ইস্যু করায় এজেন্সি সমূহের পক্ষে  কতসংখ্যক কর্মী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় গমন করবে সে সম্পর্কে আগে থেকে সঠিক ধারণা করা সম্ভব হয়নি। এজন্য অগ্রিম বিমান টিকেট সংগ্রহ করার সম্ভব ছিল না এবং শেষ মূহুর্তে বিমান/কোন এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইট পাওয়া যায়নি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কমংসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বায়রা নেতৃবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বিমানের কয়েকটি বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমেও কর্মী প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

অন্যদিকে ২৭ ও ২৮ মে, ২০২৪ তারিখের ঘূর্ণিঝড় ও অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল হয় এবং কিছু চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনার সম্ভাবনাটি শেষ মূহুর্তে তিরোহিত হয়। এ সকল বাধাবিঘ্নিত না হলে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্নকারী কর্মীগণকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রেরণ করা সম্ভব হতো।

গত ০১ জুন ২০২৪ তারিখে সংশ্লিষ্ট প্যানেলভূক্ত বিআরএ হতে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মোতাবেক এ সকল কর্মীদের সংখ্যা ৫,০০০ হাজার এর মতো হতে পারে। প্যানেলভূক্ত বিআরএ-গণ এ সকল কর্মীদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ ও চিহ্নিত করণ পূর্বক সম্ভব হলে তাদেরকে মালয়েশিয়ায় প্রেরণের ব্যাবস্থা করবে অথবা ক্ষতিপূরণ / প্রদত্ত অর্থ ফেরত দানের বিষয়ে আন্তরিকতার সাথে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ সরকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে মালয়েশিয়া সরকারের অনুসৃত নীতি মেনে সে দেশে বাংলাদেশীদের অভিবাসনের অনুমতি ও সুযোগ দিয়েছে। এর ফলে ২২ মাসের এই স্বল্প সময়ের মধ্যে পৌনে পাঁচ লক্ষ কর্মীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এতে বেকার সমস্যার সমাধানের সাথে সাথে দেশের বৈদেশকি মুদ্রা অর্জনে  অনেক সহায়ক হয়েছে। এ সকল কর্মীগণ বছরে বেতন-ভাতা হিসাবে ন্যূনতম ২১ হাজার কোটি টাকা আয় করবেন এবং এই অর্থ দেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। এই মহৎ কাজে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পৌনে পাঁচ লক্ষ পরিবারকে স্বাবলম্বী করেছেন, এসকল ব্যক্তিবর্গের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে ভবিষ্যতে আরো উদ্যোগী ভূমিকা পালনের বিষয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তবে ১০১টি প্যানেলভূক্ত এজেন্সির মধ্যেই একটি গ্রুপ যারা কম সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, তারাই নিজেদের সংকীর্ণ গোষ্ঠী স্বার্থ, বায়রার নেতৃত্ব ও হিংসাবিদ্বেষের কারণে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। এছাড়া নামে-বেনামে মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করার পরও আসন্ন বায়রা নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চারিতার্থ করতে কর্মীদের স্বার্থ চিন্তা না করে দেশে ও বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

সার্বিক দিক বিচার-বিবেচনা করে যে সকল কর্মী ই-ভিসা পেয়েছেন তাদেরকে প্রেরণের ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকারের সাথে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। এ লক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং হাই কমিশন সহ বেসরকারি পর্যায়ে বায়রা নেতৃবৃন্দকে একযোগে কাজ করতে করবে এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বায়রার সাবেক সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বেনজীর আহমেদ,এমপি, লে.জেনারেল (অব:)মাসুদ উদ্দিন  চৌধুরী এমপি; নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি, বায়রার বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার। বায়রার বর্তমান মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি  মোহাম্মদ শফিকুল আলম ফিরোজ এবং সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপন।

 

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন