ঈদের ছুটিতে অনেক মানুষ ঢাকার বাইরে চলে যাওয়ায় রাজধানীতে রক্তদাতার ঘাটতি থাকে। এসময়ে ঢাকায় অবস্থিত সুস্থ সক্ষম মানুষের প্রতি সচেতনভাবে রক্তদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান থ্যালাসেমিয়া রোগী ও রক্তদানের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
থ্যালাসেমিয়া রোগী মেহেদী হাসান বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়ার কারণে প্রতি মাসে আমার গড়ে ৩ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। আমার বোনেরও ২-৩ ব্যাগ রক্ত লাগে প্রতি মাসে। সচেতন ও মানবিক বোধসম্পন্ন সকলের প্রতি অনুরোধ জানাই, আপনারা এই ঈদের ছুটির সময় স্বেচ্ছায় রক্তদান করে যাবেন। যেন আমরা ল্যাবে এসে রক্ত পাই। আমরাও যেন সবার মতো ঈদের আনন্দের ভাগ পেতে পারি।’
কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের পরিচালক মোটিভেশন এম রেজাউল হাসান বলেন, ‘নিয়মিত রক্তদাতাদের একটা বড় অংশ উৎসব-পার্বণে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। ছুটির পরেও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে সময় লাগে। আর ঈদুল আজহার মতো এমন ছুটির আগে-পরে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রক্তের যে চাহিদা সেটি পূরণে হিমশিম খেতে হয়। সেজন্যেই স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রতি এবং সুস্থ সক্ষম সকলের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই, যারা ঢাকাতে থাকবেন তারা যেন স্বেচ্ছায় মানবিক তাগিদে রক্ত দানে এগিয়ে আসেন’।
ঈদের ছুটিতে রক্তের সংকট বিষয়ে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের সংগঠক শামীমা নাসরিন মুন্নী জানান, প্রতি বছরই এসময়টায় আমরা রক্তের চাহিদা অনুভব করি। দুঃখজনক হলেও অনেককে এসময় ফিরিয়ে দিতে হয়। শান্তিনগরে আমাদের ল্যাব কিন্তু ঈদের দিনও খোলা থাকে। আমরা ২৪ ঘণ্টাই অপেক্ষায় থাকি রক্তদাতাদের জন্যে। এক্ষেত্রে আমরা রক্তদাতাদের আহ্বান জানাই, তারা যেন নিজ উদ্যোগে সংকটময় এই সময়ে রক্ত দান করে যান।
তিন দিনব্যাপী রক্তদাতা দিবস উদযাপন করল কোয়ান্টাম
এদিকে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস ঘিরে তিন দিনব্যাপী বিশেষ আয়োজন সম্পন্ন করল কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। যা গত ১২ জুন বুধবার থেকে শুরু করে ১৪ জুন শুক্রবার বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে এসে শেষ হয়।
টানা ৩ দিনের নানা আয়োজনে অংশ নেন রক্তদাতা, রক্তগ্রহীতা (থ্যালাসেমিয়া ও অন্যান্য রোগী), রক্তগ্রহীতাদের স্বজন, ভবিষ্যত রক্তদাতা এবং চিকিৎসক, নাট্যকর্মীসহ সমাজের নানা পেশার মানুষ।
শুক্রবার রাজধানীর শান্তিনগর কোয়ান্টাম ল্যাবে ভোর থেকেই শুরু হয় রক্তদাতা উৎসব। রক্ত সংগ্রহের জন্যে কাকরাইলের কার্যালয়ে দ্বিতীয় আরেকটি অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়। এছাড়া রাজধানী ও আশেপাশে ভ্রাম্যমাণ তিনটি গাড়িতে ‘মোবাইল ক্যাম্পে’র মাধ্যমে চলে রক্ত সংগ্রহের কাজ। শত শত রক্তদাতা রক্তদানের জন্যে ছুটে আসেন সেখানে। মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, স্বজন কিংবা দম্পত্তিদের উপস্থিতিতে পারিবারিক উৎসবে পরিণত হয় রক্তদান উৎসব। মহৎ এই কাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেন অংশগ্রহণকারীরা। জীবনে প্রথমবার রক্ত দিয়েছেন এমন রক্তদাতার সংখ্যাও ছিল উল্লেখযোগ্য। ফলে রক্তের জন্যে অপেক্ষমাণ অসংখ্য থ্যালাসেমিয়া রোগীর মুখে ফুটে ওঠে আস্থা আর স্বস্তির হাসি। শুক্রবার সারাদিনের এ উৎসবে ৩৬৫ ব্যাগ রক্ত সংগৃহীত হয়। কোয়ান্টামের একদিনের সংগ্রহে যা ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ট্রাজেডির ৩০৫ ব্যাগের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যায়।
দিবস উপলক্ষে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের তিন দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১২ জুন বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ আইডিইবি ভবনে রক্তদাতা-গ্রহীতা মিলনমেলা ও বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। মিলনমেলায় অংশ নেন রক্তদাতা ও নানা রোগে আক্রান্ত নিয়মিত গ্রহীতারা। আলাপচারিতা আর কৃতজ্ঞতায় সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন গড়ে ওঠে সেখানে। হেপাটাইটিস বি ও সি প্রতিরোধে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন ও স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের গুরুত্ব বিষয়ক বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রথিতযশা মনোচিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক ও বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। ৫০ ও ২৫ বারের স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের সম্মাননা ও ক্রেস্ট দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানানো হয় অনুষ্ঠানে।