১৬/০৫/২০২৫, ৫:০১ পূর্বাহ্ণ
27.8 C
Dhaka
১৬/০৫/২০২৫, ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

আজ থেকে কর্মবিরতিতে পৌনে ৪ লাখ শিক্ষক

১১তম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে সোমবার (৬ মে) থেকে সারাদেশে এক ঘণ্টার কর্মবিরতিতে গেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। শিক্ষকদের অভিযোগ, সরকার তাদের ১২তম গ্রেডে বেতন দিতে চাইলেও তারা শুরু থেকেই ১১তম গ্রেড দাবি করে আসছেন। পাশাপাশি চাকরিতে ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ পদোন্নতির দাবি জানিয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি ও প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের ব্যানারে এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে ১৫ মে পর্যন্ত প্রতিদিন এক ঘণ্টা, ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে এবং ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি চলবে। এরপরও দাবি না মানলে ২৬ মে থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।

সারাদেশে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৪ লাখ শিক্ষক। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকরা বর্তমানে ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১১তম গ্রেডে। অথচ ১৩ মার্চ উচ্চ আদালতের এক রায়ে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে মর্যাদা দিয়ে ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই সহকারী শিক্ষকরা তাদের বেতন গ্রেড উন্নীত করার দাবিতে নতুন করে সোচ্চার হন।

শিক্ষক নেতারা বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক’ পদ বিলুপ্ত করে শুরুর পদ ‘শিক্ষক’ করার প্রস্তাব ছিল সরকার গঠিত পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদনে। সেই সুপারিশ অনুযায়ী, শুরুতে শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডে এবং চার বছর পর ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হিসেবে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার কথা বলা হয়। তবে শিক্ষক সংগঠনগুলোর দাবি, চার বছর অপেক্ষার প্রয়োজন নেই; শুরু থেকেই ১১তম গ্রেড দিতে হবে।

শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন বলেন, “আমাদের দাবি পরিষ্কার—চার বছর নয়, চাকরির প্রথম দিন থেকেই ১১তম গ্রেড দিতে হবে। পাশাপাশি, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকের পদে শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।”

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহিনুর আল-আমীন বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের ১১তম গ্রেডে বেতন দিতে হবে। ভবিষ্যতে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ মাসুদ রানা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন দিতে হলে আলাদা বেতন কাঠামো লাগবে, যা এখন সম্ভব নয়। তবে মন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।”

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে সর্বশেষ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামো হালনাগাদ করা হয়। তখন সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম ও প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে বেতন পেতেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে পদোন্নতি ও উচ্চতর গ্রেডে জটিলতা তৈরি হওয়ায় শিক্ষকরা অসন্তোষে রয়েছেন।

সরকারের সিদ্ধান্ত, আদালতের রায়, ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের অনীহা শিক্ষক আন্দোলনকে জোরদার করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, তবে সংকট দ্রুত সমাধান না হলে শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।

পড়ুন: বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি সোমবার

দেখুন: ৫ দফা দাবিতে দেশজুড়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি 

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন