অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) গাজা জুড়ে চালানো হামলায় নতুন করে কমপক্ষে আরও ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। গত ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে শুরু হওয়া এই হামলায় এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৭৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪৮ ঘণ্টায় আরও ২১৯ জন আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত মোট ৫১ হাজার ১৫৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়াদেরও অন্তর্ভুক্ত করলে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৪ জন।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন করে অন্তর্বর্তীকালীন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। সংগঠনটির শীর্ষ নেতা খলিল আল-হায়া স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাস এখন আর অস্থায়ী চুক্তিতে রাজি নয়। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের ব্যাপারে সমঝোতা চায়। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসের প্রস্তাব নাকচ করে গাজায় যুদ্ধ আরও জোরদারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে, হামাস দাবি করেছে তাদের যোদ্ধারা ইসরায়েলি-আমেরিকান বন্দি এডান আলেকজান্ডারকে পাহারা দেওয়া একজন প্রহরীর লাশ উদ্ধার করেছে। তবে এডানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট এক বিবৃতিতে বলেছেন, হামাসের এই অবস্থান প্রমাণ করে তারা শান্তির পরিবর্তে সহিংসতাকে বেছে নিচ্ছে। তিনি বলেন, “জিম্মিদের মুক্তি দাও, নতুবা নরকের মুখোমুখি হও”—ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান অপরিবর্তিত।
এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা মার্চে ভেঙে যায়। এরপর থেকেই গাজায় ফের হামলা শুরু করে ইসরায়েল। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই আগ্রাসনের ফলে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ভূখণ্ডটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত বছর নভেম্বরে গাজায় চালানো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও চলছে।
গাজার পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ, যুদ্ধবিরতির দাবি ও মানবিক সহায়তার আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েলি হামলা থেমে নেই। ফলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ এই উপত্যকা এখন মৃত্যু ও ধ্বংসের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে।
পড়ুন: গাজায় হামলা জোরদারের নির্দেশ নেতানিয়াহুর, নিহত আরও ৫২
দেখুন: ই/স/রা/ই/লি সেনাপ্রধানের বি/স্ফো/র/ক স্বীকারোক্তি
ইম/