মোহাম্মদ আল-আমীন, গাজীপুর
‘‘মা-বাবা, আমাকে মাফ করে দিও। আমি তোমাদের সাথে থাকতে পারলাম না। আমার জান আমার জন্য ফাঁসিতে ঝুলছে। তাই আমি থাকতে পারলাম না। আমি কাউকে দোষারোপ করি না, কারো কোনো দোষ নাই। আমার জান আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে, সবাই ভালো থাকবা। আমার পাশে রোকেয়ার কবর দিও মা। আমি জানিনা আমার জান কেন ফাঁসি দিলো। আর তার জন্য সম্পূর্ণ আমি দায়ী। এতে কারো কোন দোষ নাই।’’
এমন এক চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন ৭ মাস আগে বিয়ে হওয়া মো. ইসরাফিল (১৭) ও স্ত্রী মোছা. রোকেয়া খাতুন (১৫)।
২৬ এপ্রিল সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের মো. ফারুক খানের বহুতল ভবনের নিচ তলার একটি কক্ষ থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে শ্রীপুর থানা পুলিশ।
নিহত মো. ইসরাফিল শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানার হলদী গ্রামের মো. মফিজুল হকের ছেলে । স্ত্রী মোছা: রোকেয়া খাতুন ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার পস্তারি গ্রামের মো. আবুল কাশেমের মেয়ে। ইসরাফিল স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে ও রোকেয়া স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
রোকেয়ার বড় ভাই বোরহান উদ্দিন জানান, ‘‘তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরিবারের অমতে ৭ থেকে ৮ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। পরে দুই পরিবারই তাদের বিয়ে মেনে নেয়। ইসরাফিল স্ত্রীকে নিয়ে তার মা-বাবার সাথেই থাকত। গত ৪ দিন আগে ইসরাফিল ও রোকেয়া কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে যায়। তারা বৃহস্পতিবার বাসায় আসে । শুক্রবার সকালে তাদের মৃত্যুর খবর জানতে পারি। কী কারণে তারা আত্মহত্যা করেছে আমি জানিনা।’’
ইসরাফিলের মা কাজলী জানান, একই ভবনের পাশাপাশি ফ্লাটে তারা থাকেন। শুক্রবার সকালে ইসরাফিলের ফ্লাটের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ভেতরে যাই। ঘরে ইসরাফিলকে ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলন্ত দেখতে পাই। সাথে সাথে আমি তাকে জড়িয়ে ধরি। এতে ইসরাফিল ফাঁসি থেকে খুলে বিছানায় পড়ে যায়। তখন পাশেই খাটের উপর বিছানায় পড়ে ছিল রোকেয়ার মরদেহ।
কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আজমির হোসেন জানান, খবর পেয়ে একই ঘর থেকে স্বামী-স্ত্রী মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের কারণে প্রথমে স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। স্ত্রীর আত্মহত্যার বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে চিরকুট লিখে নিজেও আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন স্বামী। অধিকতর তদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পৃথক দুটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।