নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর উপর কদম রসূল সেতুর যথাযথ সমীক্ষার মাধ্যমে পশ্চিমপাশের সংযোগ সড়কের মুখটি পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। কদম রসুল সেতুর নকশায় দেখাযায় সেতুর পশ্চিমাংশের মুখটি শহরের ব্যস্ততম সড়ক ফলপট্রি নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে এসে নামবে। এটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর যানজট ভয়াবহ আকার ধারন করবে।
তাদের মতে নারায়ণগঞ্জে বড় একটি সমস্যা যাতায়াত ব্যবস্থা। একটি নগরে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সড়ককে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের এখানে রয়েছে ৭ শতাংশ। এখানে অপরিকল্পিত নগরায়নের সাথে সাথে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থা। এক সময় যাতায়াতের সুব্যবস্থার কারণে যে নারায়ণগঞ্জ পূর্ববঙ্গের সিংহদ্বারে পরিণত হয়েছিল, আজকে একশ চল্লিশ বছর পরে তা জনদুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারা বলেন, বর্তমানে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে একটি হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়কে সংযুক্ত করার প্রয়োজনে নদীর উপর কদম রসুল সেতু নির্মাণ। সেতু নির্মাণের সংবাদটি আমাদেরকে আনন্দিত করেছে।
শনিবার সকালে নগরীর চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের আহবায়ক রফিউর রাব্বি এ দাবি জানান। এসময় আরো উপস্থিতদ ছিলেন এ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারন সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম দিপু, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এ্যাডভোকেট জিয়াউল ইসলাম কাজল, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নারায়ণগঞ্জ কমিটির সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েলসহ অনেকে।
নাগরিক আন্দোলনের আহবায়ক রফিউর রাব্বি জানান, এমনিতেই নগরীর সিরাজ উদদ্দৌলা সড়কটিতে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। এই সড়কে শহরের গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল, নারায়ণগঞ্জ কলেজ, পাইকারি পণ্য বেচাকেনার মার্কেট ফলপট্রি, দ্বিগুবাবুর বাজার, পাশে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ টার্মিনাল ও পার্শ্ববর্তী দেশের বৃহত্তম পাইকারি সুতার বাজার টানবাজার থাকার কারনে সড়কটিতে প্রতিদিন লাখের বেশি মানুষ চলাচল করে। তার উপর নতুন করে সেতুর সংযোগ সড়কের মুখটি ফলপট্রি দিয়ে নামলে নদীর পূর্বপাড় থেকে প্রতিদিনর প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এসে এই সড়কে নামবে। এতে করে নগরীরর যানজট কি অবস্থা হবে সে সমীক্ষা সেতু নির্মাণের আগে সঠিক ভাবে করা হয়নি বলে আমরা মনে করি।
তিনি দাবি করেন, এত বড় সেতুর নকশা তৈরির ক্ষেত্রে নগরের বাস্তবতা ও সংকট বিবেচনায় নেয়ার উচিত ছিলো। আমার মনে করি এই প্রকল্পে যথাযথ সমীক্ষারক্ষেত্রে ঘটতি রয়েছে। তাই সেতু বাস্তবায়নকারি সংস্থা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) সেতুর পশ্চিম পাশের সংযোগ সড়কটি পুনর্নির্ধারণ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য কদম রসুল সেত প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেকে পাস হয়। ২০১৮ সালে কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত নির্মাণের সময়সীমা বেধেঁ দেয়া হয়েছে। সেতুটির মুল দৈর্ঘ ৩৮০ মিটার, প্রস্থ ১২ দশমিক ৮০ মিটার, সংযোগ সড়ক ১৩৭৯ মিটার। এর প্রকল্প ব্যয় ৭৩৫ কোটি টাকা। সেতুটি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) যৌথভাবে নির্মাণ করবে। কিন্তু এই সেতুর প্রকল্প-প্রক্রিয়া দীর্ঘ দিন ধরে চলমান থাকলেও এই সেতু ব্যবহারকারি নাগরিকদের সাথে এ প্রকল্প নিয়ে মতবিনিময় বা তাদের অভিমত জানার জন্য কখনো কোন কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই।