শেখ হাসিনা কোথায় ? উত্তরে যদি বলা হয়, জানিনা, আর সেটি যদি খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয় এটা শুনে কেমন লেগেছে আপনার? কিন্তু নির্মম সত্য এটাই এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, শেখ হাসিনা কোথায়!
একটা রাষ্ট্রের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী। দুই মাস আগেও তিনি ছিলেন দেশের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিপতি। বুঝলাম তিনি পালিয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসহনীয় অভিযোগ আছে! তাই বলে কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন, সেই খবর সরকারের কাছে থাকবে না?
ধরে নিলাম, তার অপরাধের মাত্রা এতো বেশি যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে যে শেখ হাসিনার লোকেশন কোথায় সে খবর তারা রাখবেন না ! তাহলে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় নির্বিচারে ছাত্র হত্যার দায়ে যাকে আপনারা দেশে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছেন। তিনি কোথায় সেই খবর আপনারা রাখবেন না? যদি নাই জানেন, শেখ হাসিনা কোথায় আছে, তাহলে কিভাবে কার কাছে প্রত্যার্পনের আবেদন করবেন?
প্রশ্ন আরও উঠছে, তবে তার আগে চলুন দেখে নিই। শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে কি তথ্য প্রচলিত আছে। বিবিসি বলছে, শেখ হাসিনা ভারতেই আছেন। ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় বলছে তাঁর মা ভারত থেকে সরে যায়নি। বহুল প্রচারিত তথ্য হচ্ছে, শেখ হাসিনা দুবাই গেছেন। আরব আমিরাতের সরকার তাকে রাখেনি, আঠারো ঘন্টা পর আবার ফিরে এসেছেন ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আরব আমিরাতের আজমানে আছেন তবে তা নিশ্চিত নয়।
আবার আরেকটি পক্ষ বলছে, দুবাইয়ে তার জায়গা না হওয়ায় সব শেষ গন্তব্য বেলারুশ। এর ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে, রাশিয়া, চায়না, আমেরিকা সমর্থিত কোন দেশে শেখ হাসিনাকে রাখা যাবে না। তাই বেলারুশে তার জায়গা মিলেছে। অবশ্য এই আলাপটি আগেও উঠেছিলো। কারণ বিশ্বের স্বৈরাচারী সরকার প্রধানদের বেশির ভাগেরই শেষ ঠিকানা বেলারুশ।
শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে এমন কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। কেন জানবে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ? এর অবশ্য কয়েকটি দিক হতে পারে। এক, শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে সম্ভাব্য কোন দেশের কাছেই জানতে চায়নি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। দুই, জানতে চাইলেও যেসব দেশে শেখ হাসিনা থাকার সম্ভাবনা আছে অর্থাৎ ভারত, আরব আমিরাত কিংবা বেলারুশ বা অন্য কোন রাষ্ট্রে তাদের কেউই অন্তবর্তী সরকারকে তথ্য দেয়নি।
তিন, দেশগুলো যদি তথ্য দিয়েও থাকে সরকার তা প্রকাশ না করে তথ্য গোপন করতে পারে। কিন্তু যে শেখ হাসিনাকে সরকার ফিরিয়ে আনতে চায় তাঁর অবস্থানের তথ্য গোপন করেই বা কী করবে সরকার? চতুর্থত যে বিষয়টি দাঁড়ালো তা হলো, যেহেতু অন্তত এটা নিশ্চিত যে তিনি যেখানেই আছেন জীবীত আছেন, ভালো আছেন কিনা জানা নেই, তবে সুস্থু আছেন এটা বলা যায়।
সম্ভাব্য এই চারটি উত্তর থেকে আমরা দুটি ধারণায় পৌঁছাতে পারি ! এক, সম্ভাব্য যে দেশগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভাল নেই। অর্থাৎ সরকার পরিবর্তনের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে নতুন বার্তা আসার কথা, তা এসেছে ঠিকই কিন্তু তার গ্রাফ নিচের দিকে।
অথবা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ববাদে অন্য কোন দেশ এই সরকারকে শেখ হাসিনা ইস্যুতে সহায়তা করতে নারাজ।
এসব ধারণার যে কোন একটি সঠিক অথবা কোনটিই সঠিক নয়। তাহলে তাই হয় তাহলে সংস্কার কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও জরুরি। নইলে সঠিক তথ্য না থাকার পরিণতি কি তা হাসিনা সরকার ৫ আগস্ট বুঝেছে।