প্রতিদিনই কোনো না কোনো মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হয় বিএনপির নেতাকর্মীদের। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাই মামলার আসামি। এসবের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১১২টি, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উব নবী সোহেলের বিরুদ্ধে ৪৫০টি, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ৩০০টি এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ২০০টি মামলা রয়েছে।
বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে সরকার মামলা দিয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যদিও তার বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে সেই তালিকা চেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ বিষয়ে নাগরিককে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘ওবায়দুল কাদের সিনিয়র রাজনীতিবিদ। তার বয়স হয়েছে, তাই এখন অনেক কিছুতেই ভুল করেন কিংবা ভুল বোঝেন। আমাদের মহাসচিব ৬০ লাখ মামলার আসামির কথা বলেছেন, কিন্তু ওবায়দুল কাদের এটাকে ৬০ লাখ বন্দি বলছেন। কথা উনারা ঘুরিয়ে দিতেই পারেন, উনাদের হাতে রাষ্ট্রযন্ত্র, উনাদের হাতে মিডিয়া।’’
বিএনপির মামলার তথ্য ও সংরক্ষণ শাখার হিসাব বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ এর জুলাই পর্যন্ত বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১টি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৪০ লাখের ওপরে। ২০২৪ এর জানুয়ারি পর্যন্ত এই সংখ্যা ৬০ লাখে দাঁড়িয়েছে। কেবল ঢাকা মহানগরের ৫০ থানায় মামলা রয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি। তবে একই ব্যক্তি একাধিক মামলার আসামিও রয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘‘মামলার সংখ্যা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে লাভ নেই। বাংলাদেশের মানুষ জানে, সরকার আজকে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে।’’
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মামলায় শঙ্কিত না হয়ে দল হিসেবে বিএনপিকে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ।
‘‘৬০ লাখ মামলা কি মুখের কথা? কেউ বললো আর আমরা বিশ্বাস করে নিলাম, এটার কারণ নেই। রাজনীতিতে মামলার অজুহাত সামান্য বিষয়। এটাকে বড় করে দেখার কিছু নাই। তবে বিএনপির অন্যদিক দিয়ে নিজেদের অবস্থান প্রমান করার সুযোগ রয়েছে। বিএনপি সেই সুযোগ ব্যবহারে ব্যর্থ।’’
বিএনপির দাবি, সরকার আদালতে প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনে অযোগ্য করতেই সিনিয়র নেতাদের সাজা দিচ্ছে। একইসঙ্গে বিএনপির মাঠপর্যায়ের এবং সহযোগী সংগঠনের সক্রিয় নেতাকর্মীদের শাস্তি দিয়ে আন্দোলন স্তিমিত করার কৌশল নিয়েছে।
সাইফুল শাহীন, সিনিয়র রিপোর্টার