39.2 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৮, ২০২৫

রাশিয়ার জয়যাত্রা অব্যাহত, বিপরীতে সংলাপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জেলেনস্কি 

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীর জয়যাত্রা অব্যাহত থাকলেও, ইউক্রেনের অবস্থান বিপরীত। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এখন সংলাপের দিকে নজর দিয়েছেন এবং বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সোমবার (১০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সুমি অঞ্চল এবং রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে নতুন সাফল্য অর্জন করেছে মস্কো। অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি সৌদি আরবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনার আগে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপে বসতে সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

মার্কিন ও ইউক্রেনীয় আলোচকরা মঙ্গলবার লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর জেদ্দায় আলোচনায় বসবেন, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি চুক্তির জন্য একটি কাঠামো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জোরকদমে কাজ করছে।

আসন্ন আলোচনা সত্ত্বেও, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক ব্রিফিংয়ে জানায়, তাদের বাহিনী কুরস্ক সীমান্তের কাছে সুমি অঞ্চলের ছোট্ট গ্রাম নোভেনকে মুক্ত করেছে। মস্কো কুরস্কের লেবেদেভকা, মালায়া লোকনিয়া, চেরকাসকোয়ে পোরেচনয়ে এবং কোসিৎসা গ্রাম পুনরুদ্ধারের ঘোষণাও দেয়।

রাশিয়া ২০২২ সালে সর্বাত্মক আক্রমণের শুরুতে ইউক্রেনের সুমির কিছু অংশ সংক্ষিপ্তভাবে দখল করে নিয়েছিল কিন্তু তারপর থেকে সেখানে কোনও অঞ্চল দখল করেনি।

অবশ্য কিয়েভ এখনও রাশিয়ার নোভেনকে দখল করার দাবির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই এলাকা দখলের ফলে রাশিয়ান সৈন্যদের একটি প্রধান ইউক্রেনীয় সরবরাহ পথ অবরুদ্ধ করার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে রোববার সন্ধ্যায় তার ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, আমি আমাদের সমস্ত ইউনিটকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা দখলদারকে ধ্বংস করার, আক্রমণ প্রতিহত করার এবং আমাদের অবস্থান রক্ষা করার জন্য অবিচল থেকে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।

তিনি বলেন, ফ্রন্ট-লাইনে শক্তিশালী অবস্থান থাকার ওপরই নির্ভর করছে কূটনীতিতে আমাদের অবস্থান কতটা শক্তিশালী হবে। আমরা ইউক্রেনের ফ্রন্ট-লাইনের চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।

হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সাথে ট্রাম্পের জনসমক্ষে বিবাদের পর, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক গোয়েন্দা তথ্য এবং স্যাটেলাইট তথ্য ভাগাভাগি বন্ধ করে দিয়েছে, পাশাপাশি দেশটিকে সাহায্য প্রদানও স্থগিত করেছে। রাশিয়ার আক্রমণের অবসানের জন্য কিয়েভকে আলোচনায় বাধ্য করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউক্রেন যুদ্ধই ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মূলত, জেলেনস্কি ওয়াশিংটনের সাথে খনিজ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করার পরই ট্রাম্পের ক্রোধের মুখোমুখি হন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মতে, ওই চুক্তিতে মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন তাতে কোনো ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরিবর্তে, তারা ইউরোপকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জন্য সাহায্য বাড়াতে বলেছে।

ইউরোপীয় নেতারা ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে সম্মত হয়েছেন কারণ তারা রাশিয়ার হুমকির বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওয়াশিংটন ইউক্রেনের ন্যাটো উচ্চাকাঙ্ক্ষার ওপরও ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছে।

এমন অবস্থায় জেলেনস্কি গত শনিবার নিশ্চিত করেন, তিনি শিগগিরই সৌদি আরব সফর করবেন এবং সোমবার ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সাক্ষাতের পর ইউক্রেনের কূটনৈতিক এবং সামরিক প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈঠকে বসবেন।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই যুদ্ধের প্রথম দিক থেকেই ইউক্রেন শান্তির চেষ্টা করে আসছে। বাস্তবসম্মত প্রস্তাবগুলো (আলোচনার) টেবিলে রয়েছে। দ্রুত এবং কার্যকরভাবে এগিয়ে যাওয়াই মূল চাবিকাঠি।

এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ গত সপ্তাহে নিশ্চিত করেছেন, তিনি সৌদি আরবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করবেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি এবং দীর্ঘস্থায়ী চুক্তির জন্য একটি কাঠামো নিয়ে আলোচনা করবেন সেখানে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ১০ থেকে ১২ মার্চের মধ্যে ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনার জন্য সৌদি আরব সফর করবেন। তিনি আঞ্চলিক বিষয় এবং মার্কিন-সৌদি আরব সম্পর্ক জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে যুবরাজ মোহাম্মদের সাথেও বৈঠক করবেন।

রুবিও গত শুক্রবার ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহার সাথে কথা বলেছেন এবং ট্রাম্প যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ শেষ করতে চান বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলেনস্কি এবং ট্রাম্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি চিৎকার-চেঁচামেচির পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর এবং ইউক্রেনীয় নেতাকে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে বলার পর এটিই হবে মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের প্রথম উচ্চ-স্তরের বৈঠক।

দেখুন:এখন কী হবে জেলেনস্কি কিংবা ইউক্রেনের?

পড়ুন:ট্রাম্পের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জন্য দুঃখ প্রকাশ জেলেনস্কির

এসএম/ইম

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন