আলউলা, মধ্যপ্রাচ্যে একসময়ে এই শহরে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিলো। এখন এই এলাকার হেগ্রা স্বীকৃতি পেয়েছে সৌদি আরবের প্রথম ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে। এটা ছিলো নেবাটাইয়ান সভ্যতার অংশ। এ সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ শহরের নাম ছিলো হেগ্রা, যার রাজধানী পেট্রার অবস্থান ছিলো বর্তমানের জর্ডানের উত্তরের অংশে। ২০১৯ সালে বিদেশী পর্যটকদের এ এলাকার আসার অনুমতি মেলে। আলউলার পুরো এলাকাজুড়ে দেখা যাবে বিভিন্ন ঢিবি, সমাধি, পাহাড়ি শিলালিপি।
হেগ্রায় রয়েছে বিখ্যাত ৭২ ফুট উচ্চতার স্মৃতিস্তম্ভ কাসার আল ফারিদ বা নিসঃঙ্গ প্রাসাদ। প্রায় ২শ বছর ধরে দক্ষ রাজমিস্ত্রীরা হেগ্রার এ দুর্গগুলো তৈরি করেছেন। হেগ্রাতে এমন ১১১টি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। হেগ্রার সবচেয়ে বড় সমাধিস্থল এলাকা জাবাল আল বানাত। এখানে একসঙ্গে ২৯টি সমাধি রয়েছে যেগুলো নারীদের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে।
একটি সমাধি আছে যার নাম জাবার আহমাদ, যেখানে হিনাত নামে স্থানীয় এক নারীর সমাধি রয়েছে। হিনাত তার নিজের এবং পরিবারের ৮০ উত্তরসূরির জন্য নিজস্ব সমাধি তৈরির জন্য যথেষ্ট সম্পদশালী ছিলেন। এই সমাধিস্থলগুলো খনন করে পাওয়া মানুষের দেহাবশেষ, পোশাক ইত্যাদি সামগ্রী প্রত্নতাত্ত্বিকদের নাবাতিয়েন জীবন সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির ফিচার প্রতিনিধি ইউলিয়া ডেনিসউক এ নগরীর সৌন্দর্য্য বর্ণনা করে লিখেছেন; বছরের পর বছর আড়ালে থেকে নিজেকে সামনে আনছে আলউলা। মরুভূমির বালুর রৌদ্রোজ্বল দৃশ্য ধারণ করতে করতে তিনি এই এলাকার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়েও ভেবেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের এমন বিরূপ পরিবেশেই মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখার নতুন নতুন উপায় সামনে এসেছে। আরব উপদ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ এ সাংস্কৃতিক এলাকার সভ্যতা বিকাশ যতটা স্পষ্ট, বিশ্বের অন্য কোথাও তেমনটি নেই। সৌদি আরবের হিজাজ অঞ্চলের বালুপাথর এবং গ্রানাইটের পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত মরু এলাকাটি গত ২ লক্ষ বছর ধরে মানবসভ্যতা ধারণ করে আছে।
শুষ্ক এলাকার উর্বর ভূমি, পানির অস্তিত্ব এবং পর্বতসমৃদ্ধ মরুভূমি বেশ কয়েকটি সভ্যতা বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। খ্রিষ্টের জন্মের ১শ থেকে ৮শ বছর আগে এই এলাকায় দাদান এবং লিহয়ান সামাজ্র্যের উত্থান ঘটে। খ্রিষ্টপূর্ব ৮শ সময়ে আলউলা উপত্যকায় পাথরনির্মিত দাদান শহরের বিকাশ ঘটে। দাদান পরবর্তিতে লিহিয়ানাইট সামাজ্য নামে পরিচিত পায়। এ অঞ্চলটি মিশর, মেসোপটেমিয়া এবং ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের সুগন্ধি সামগ্রী লোবানের বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিলো।
দাদানিয়ানরা নিজেদের ইতিহাস নিজেদের মতো করে লিখেছে। প্রায় ২৫শ বছরের পুরোনো ইতিহাস ‘জাবাল ইকমাহ’ নামক স্থানে শিলালিপিতে খোদাই করে সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। এই স্থানটিকে আলউলার উন্মুক্ত পাঠাগারও বলা হয়। লেখাগুলোতে সৃস্টিকর্তার জন্য নগরবাসীদের প্রার্থনার বার্তা রয়েছে।
নাবাতিয়েন সভ্যতা হারিয়ে যাওয়ার কয়েকশ বছর পরে এই উপত্যকাটিতে কিছু গ্রাম গড়ে উঠলেও তা হতে সময় নিয়েছে; ৭ম শতকে যখন ইসলামের বিকাশ ঘটে। এ সময়ে এই এলাকার গুরুত্ব বাড়তে থাকে সৌদির পবিত্র শহর মক্কায় আসাদের জন্য্। যে কারণে আলউলা ওল্ড টাউন নামে পরিচিত আদ-দিরায় জনবসতি বাড়তে থাকে।
দাদানাইটস এবং লাইহিয়ানাইট সময়কার পাথর দিয়েই ১০ম শতকে গড়ে ওঠে নতুন পাথুরের নগরী। বসতি, দোকান, মসজিদ, প্রতিরক্ষা দুর্গসহ এই নগরী টিকে থাকে পরবর্তি ৮শ বছর। এরপর ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণের জন্য এখানকার স্থানীয়দের আধুনিক আলউলা শহরে সরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে পুরাতন এ শহর দেখা মিলবে পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘর, সিরামিক এবং কারুপণ্যের। পাওয়া যায় হাতে তৈরি জিনিসপত্র এবং খেজুরও।