কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এমন উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে পাকিস্তান সফলভাবে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। শনিবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ৪৫০ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য আবদালি অস্ত্র ব্যবস্থা (এডব্লিউএস) ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণের ঘোষণা দেয়। ইসলামাবাদ জানায়, এটি ইন্দুস সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে উৎক্ষেপণ করা হয়।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল সেনাবাহিনীর অপারেশনাল প্রস্তুতি যাচাই এবং উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম ও ম্যানুভারেবিলিটি প্রযুক্তির সক্ষমতা প্রদর্শন। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করেন পাকিস্তানের কৌশলগত বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এবং সেনা প্রধান উৎক্ষেপণের জন্য সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৫ জন ভারতীয় ও একজন নেপালি নাগরিক নিহত হন। হামলার দায় কেউ স্বীকার না করলেও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো পাকিস্তানপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠীকে দায়ী করে আসছে। এরই মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের দাবি জোরালো হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রতিক্রিয়ায় সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে। এলওসি ও আন্তর্জাতিক সীমান্তজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। কুপওয়ারা, উরি ও আখনুর সেক্টরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গুলি চালালে ভারতীয় বাহিনী পাল্টা জবাব দেয় বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন, ভারত আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলা চালাতে পারে। যদিও সেই সময়সীমা অতিক্রম করলেও এখনও পর্যন্ত বড় ধরনের সামরিক অভিযান হয়নি। তবে উত্তেজনা প্রশমনে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশকে সংযত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে এবং কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চেয়েছে।
এদিকে ভারত পাকিস্তান থেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজের ভারতীয় বন্দরে প্রবেশ এবং পাকিস্তানে ভারতীয় জাহাজ পাঠানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডাকযোগেও পাকিস্তান থেকে আর কোনো চিঠি বা পার্সেল ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানানো হয়েছে।
সামরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি পাকিস্তানে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাওয়ালপিণ্ডিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। সেখানকার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ ৩৮টি চেকপয়েন্ট এবং ১৬টি সাইরেন স্থাপন করেছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবককে উদ্ধার কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার আগেই কূটনৈতিক পথে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
পড়ুন: ভারত নাকি পাকিস্তান, সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?
দেখুন: এবার পাকিস্তানে বন্ধ আইপিএল সম্প্রচার
ইম/