গত ১৩ বছর ধরে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী রয়েছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৩ বছর সহ্য করেছি আর ১৩ মিনিটও অপেক্ষা নয়, আজহারকে মুক্তি দিন।’
আজ মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে পল্টন মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কবলে ছিল। ফ্যাসিবাদের বিপক্ষ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে হিংস্র প্রথম থাবাটি এসেছিল জামায়াতে ইসলামীর উপরে। সব শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এক এক করে বন্দি করা হয়। সে সময় দলের গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের কাঁধে। তিনি তখন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এক এক করে ১৩টি বছর অতিবাহিত হয়েছে। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে তিনি এখনো আছেন। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হলো, আমাদের প্রশ্ন ফ্যাসিবাদের কঠিন সাক্ষী আজহারুল ইসলাম মুক্ত হলেন না কেন? কোন জিনিসটা তাকে এখনো আটকে রাখতে বাধ্য করেছে? কেন এই বৈষম্য?’
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা তো নিজ থেকে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলাম। এই উদারতা আমরা দেখিয়েছিলাম। ভবিষ্যতেও এই উদারতা আমরা দেখিয়ে যাব। কিন্তু এটিএম আজহারুল ইসলাম কবে মুক্তি পাবেন, সেটি আমরা জানতে চাই সরকারের কাছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো চাইনি, কল্পনাও করিনি, এভাবে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হবে আজহার ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে। আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই সমাবেশ-বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আশা করব, সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন। রাজনীতির মজলুম নেতৃবৃন্দকে যেভাবে একে একে মুক্তি দিয়েছেন তেমনিভাবে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটিএম আজহারুল ইসলামের জীবন থেকে এক এক করে ১৩টি বছর হারিয়ে গেছে। এই ১৩টি বছর কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আর ১৩ মিনিটও তিনি জেলের ভেতর থাকুক আমরা তা আর চাই না।’
জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা ভদ্র, কিন্তু আমরা বোকা নই। আমাদের ভদ্রতাকে কেউ যেন দুর্বলতা মনে না করেন। ভদ্ররা যখন শক্ত হয় তখন কি পরিমাণ শক্ত হতে হয় তা গত সাড়ে ১৫টা বছর বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। আমি অন্যদের কথা বলবো না কে কি করেছেন, কার সাথে আপস করেছেন, আমি বলতে চাই না। মহান আল্লাহর দেওয়া শক্তির কারণে গত সাড়ে ১৫টি বছর জামায়াতে ইসলামী কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি। জীবন দিয়েছে আপস করেনি। বহু আপসে প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছে৷ ফাঁসির কাষ্ঠে আমাদের নেতৃবৃন্দকে পাঠানোর আগে জনে জনে দফায় দফায় প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু আমাদের বীর নেতৃবৃন্দ সেই প্রস্তাবগুলোকে পায়ে ঠেলে ফেলে দিয়েছে, আমরা সেই বীরদের উত্তরসূরি সুতরাং আর ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। তাকে মুক্তি দিন।’
তিনি বলেন, ‘কেন আমাদের নিবন্ধন আটকে রেখেছেন? আমাদের নিবন্ধন তো জালিম সরকার কেড়ে নিয়েছিল। সেই জুলুম কি আপনারাও আমাদের উপরে করবেন? এজন্যই কি হাজার-হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে? হাজার-হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে? বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো বৈষম্য বরদাস্ত করব না। সব বৈষম্যের কবর রচনা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অতীতেও দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল। ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্রের পরেও সেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। তবে সব ষড়যন্ত্র একে একে নস্যাৎ করে দিয়েছেন আল্লাহ। আমরা আশাবাদী আগামীতেও সব ষড়যন্ত্র আল্লাহ ব্যর্থ করে দেবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা সব ধরনের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।’
এদিন বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলকে কেন্দ্র করে লোকে-লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে পল্টন মোড়, বায়তুল মোকাররম, নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল, জিরো পয়েন্ট ও প্রেসক্লাব এলাকা। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এনএ/