শনিবার ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে রাজধানীর অস্থায়ী কোরবানির হাটগুলো এখন উৎসবে রূপ নিয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দরদামের প্রতিযোগিতায় হাটগুলো যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সরেজমিনে রাজধানীর তেজগাঁও, গাবতলী, নতুন বাজার, শনির আখড়া, কমলাপুর, শাজাহানপুর, রামপুরা ও মেরুল বাড্ডা হাট ঘুরে ওপকজারোদ আর অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চলছে শেষ মুহূর্তের জমজমাট বেচাকেনা।
সবকিছু মিলিয়ে তুলনামূলক মাঝারি কিংবা ছোট গরুর চাহিদা এবার বেশি। বিক্রিও বেশি হচ্ছে এই আকারের গরু। এর ফলে তুলনামূলক কম বিক্রি হচ্ছে বড় গরু। এতে বিপাকে আছেন বড় গরু নিয়ে হাটে আসা ব্যাপারীরা। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাজধানীর তেজগাঁও টেকনিক্যাল মাঠে গরুর হাট ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে হাটের এ চালচিত্র জানা গেছে।
রাস্তার পাশে গরুর হাট বসানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলজুড়ে হাট ছড়িয়ে পড়েছে। হাটে ৭০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকা দামের গরু উঠেছে। বাজেট ও ব্যবস্থাপনা সুবিধার কারণে ক্রেতারা বেশি ঝুঁকছেন ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দামের গরুর দিকে।

ঈদ উল আজহা উপলক্ষ্যে জমে উঠেছে রাজধানীর সবচেয়ে বড় এবং স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি গরু-মহিষ, বিভিন্ন জাতের খাসি, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দুম্বা এবং উটও মিলছে গাবতলীর পশুর হাটে।
বিভিন্ন সাইজের গরু বাজারে উঠলেও সবচেয়ে বেশি ছোট থেকে মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা দেখা গেছে। এক লাখ টাকার মধ্যে যেসব গরু পাওয়া যাচ্ছে সেসব গরু বিক্রি বেশি হচ্ছে। আবার বড় গরুর চাহিদা থাকলেও ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন এবং দাম জিজ্ঞেস করছেন বলে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু, মহিষ, ছাগল ও দুম্বাসহ নানা প্রজাতির পশু রাজধানীর গাবতলী হাটে নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। পুরোদমে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠেছে গাবতলী। কেউ বাজেটের মধ্যে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ গন্তব্যে। আবার কেউ পশু কেনার উদ্দেশ্যে দামদর করছেন। গত কয়েকদিনের তুলনায় গতকাল রাত থেকে বেচাবিক্রি বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। এই বেচা-বিক্রির দাপট শনিবার ভোর পর্যন্ত থাকবে বলেও জানান বিক্রেতারা।
উত্তর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ থেকে শুরু করে রেলওয়ে কলোনির ভেতরের হাটটি এবার কাদা ও পশুর বর্জ্যে সয়লাব। তবুও এখানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ার মতো।
বনশ্রী ও আফতাবনগরের হাট বন্ধ থাকায় শাহজাহানপুর হাটে ক্রেতাদের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ। গতবারের চেয়ে দাম ১০-১৫ হাজার টাকা বেশি হলেও, শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশু না পাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই পশু কিনেই বাড়ি ফিরছে।
জানা গেছে, মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি, এগুলোর দাম এক লাখ থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে বড় গরুর দাম দুই লাখ থেকে সাড়ে দুই লাখের ওপরে হওয়ায় ক্রেতা পাওয়া কঠিন হচ্ছে।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির পেছনের মাছ বাজারের খালি জায়গায় এবার ছোট আকারের এই হাটে মূলত ছাগল ও মাঝারি গরু দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় বিক্রেতারা জানান, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবছর পশু লালনপালনে বাড়তি খরচ হয়েছে, যে কারণে ছোট আকৃতির গরুতেও বাড়তি দাম চাইছেন তারা। আর এই বাড়তি দামে অনেক ক্রেতা ছোট গরুর বিষয়ে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে।
কয়েকজন একসঙ্গে শরিক হয়ে বড় গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তারপরও দাম বাড়তি হওয়া সত্ত্বেও ছোট গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে হাটগুলোতে। সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় অনেকেই ভোরেই হাটের জন্য বের হয়েছিলেন। বিভিন্ন হাট ঘুরে পছন্দের পশু কিনছেন।
রামপুরা টিভি সেন্টার সংলগ্ন ইক্বরা মাদ্রাসার খালি জায়গায় প্রথমবারের মতো বসেছে এই হাট। গলির ভেতরে হওয়ায় জায়গা কম হলেও ক্রেতাদের উৎসাহের কমতি নেই। এই হাটে ব্যবসায়ীরা বড় গরু এনেছেন বেশি। বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকায়। তবে ক্রেতারা দাম কম বলছেন, কিন্তু এই দামে বিক্রি করলে গরুর পেছনে খাবারের খরচই উঠছে না বলে জানান বিক্রেতারা।
কমলাপুর ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব সংলগ্ন অস্থায়ী পশুর হাটে মাঝারি থেকে বড় আকারের গরুর সংখ্যা বেশি। বড় গরুর দাম নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও, মাঝারি আকারের গরু এক লাখ থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকায় দ্রুত বিক্রি হচ্ছে। তবে বিক্রেতাদের আশঙ্কা, দুই লাখের ওপরে দামের বড় গরুগুলোর অধিকাংশই অবিক্রীত থেকে যেতে পারে।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় এবার ১৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসেছে ১০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বসেছে ৯টি অস্থায়ী হাট। ঈদুল আজহার দিনসহ মোট ৫ দিন নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।
অস্থায়ী ১৯টি হাট ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় স্থায়ী গাবতলী হাট এবং দক্ষিণ সিটির আওতায় স্থায়ী সারুলিয়া হাটেও কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এ হিসেবে এ বছর ঈদুল আজহায় রাজধানী ঢাকায় কোরবানির পশু কেনা-বেচার জন্য মোট ২১টি স্থানে হাট বসেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাজধানীর আফতাবনগর ও মেরাদিয়ায় এবার পশুর হাট বসবে না।