অনেক দেশের সরকারপ্রধান নিজেদের শাসনকালে বিভিন্ন কারণে ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল আসাদ এবার সে তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।
দীর্ঘ ২৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর রোববার (৮ ডিসেম্বর) সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) চূড়ান্ত হামলার পর আল আসাদ তার দেশ থেকে পালিয়ে যান।
এ ধরনের পালানোর ঘটনা একেবারেই নতুন নয়। বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা একাধিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনগণের বিদ্রোহ কিংবা বিদেশি চাপের কারণে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছেন। এমন কিছু উদাহরণ রয়েছে-
গোটাবায়া রাজাপাকসে (শ্রীলঙ্কা)
২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি ছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। প্রশাসনের তীব্র প্রতিবাদ এবং জনসাধারণের আন্দোলনে মুখে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দেশের অর্থনীতি তলানিতে চলে আসে। বিবিসির তথ্যানুসারে, দেশটি প্রতিদিনের বিদ্যুৎ উৎপাদ হ্রাস এবং এমনকি জ্বালানী, খাদ্য এবং ওষুধের মতো মৌলিক জিনিসগুলির ঘাটতির মুখোমুখি হয়।
আশরাফ ঘানি (আফগানিস্তান)
আশরাফ ঘানি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালের গ্রীষ্মে, তালেবানরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে ঘানি সরকার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং হুমকির সম্মুখীন হন।
২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুলে প্রবেশ করায় বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ঘানি আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যান। বিবিসির সাথে একটি সাক্ষাৎকারে, সাবেক আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বলেন, রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে মাত্র ২ মিনিট সময় দেয়া হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আবুধাবিতে যাওয়ার আগে তিনি প্রথমে তাজিকিস্তানে পালিয়ে যান, যেখানে তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।
পারভেজ মোশাররফ (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
সোহার্তো (ইন্দোনেশিয়া)
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোহাম্মদ সোহার্তো ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। পরবর্তীতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
ইরানের শাহ বংশের মোহাম্মদ রেজা পাহলভি
ইরানের শাহ বংশের শেষ শাসক মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ১৯৭৯ সালে ক্ষমতা ছেড়ে মিসরে পালিয়ে যান, যেখানে আয়াতুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে ইসলামিক বিপ্লব ঘটে। পরে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান, সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।
সোহার্তো (ইন্দোনেশিয়া)
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোহাম্মদ সোহার্তো ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। পরবর্তীতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
অ্যারিস্টাইড (হাইতি)
হাইতির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জিন-বার্ট্রান্ড অ্যারিস্টাইড তার উত্তাল রাজনৈতিক কর্মজীবনে নির্বাসনের সম্মুখীন হন। ১৯৯১ সালে প্রাথমিকভাবে তিনি নির্বাচিত হন। একই বছরের শেষের দিকে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে এরিস্টাইডকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। মার্কিন নেতৃত্বাধীন হস্তক্ষেপ তাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার পর ১৯৯৪ সালে তিনি আবারো দেশে ফিরে আসেন।
সুদানের প্রধানমন্ত্রী সাদিক আল মাহদি
সুদানে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাদিক আল মাহদি। দেশটিতে রাজনৈতিক সংকটের কারণে তিনি পালিয়ে যান।