শেখ হাসিনার পতন এবং পরবর্তী বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে একটি বিশেষ তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। এতে যেমন আওয়ামী লীগের আমলে শেখ হাসিনার ভয়াবহ দুঃশাসনের কথা তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই ক্রান্তিকালে দায়িত্ব নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।
শুক্রবার (২ মে) প্রকাশিত ‘রিবিল্ডিং বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি আফটার শেখ হাসিনা’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্রে ফুটে উঠেছে ১৫ বছর পুলিশ, র্যাবসহ নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে কীভাবে খুন, গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী মত ও চিন্তাশক্তিকে দমন করা হয়েছিল। এছাড়াও উঠে এসেছে কীভাবে ফ্যাসিবাদের ইতিহাস রচনা করেছিল শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার।
আওয়ামী লীগ সরকারের নানা অপশাসনের বর্ণনা তুলে ধরে হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা উঠে এসেছে আল জাজিরার এ তথ্যচিত্রে। এছাড়াও দেশ গঠনে প্রশাসনের সংস্কারসহ, বিচার ব্যবস্থা পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরা হয়।
এতে আরও বলা হয়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান।
প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তারা (শিক্ষার্থীরা) আমাকে ফোন দিয়েছিল, আমি বললাম, না আমি না। আমি দেশ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত হতে চাই না। বাংলাদেশে অনেক যোগ্য লোক আছে, তাদের খুঁজে বের করো। কিন্তু সবাই বলছিল, আপনাকেই সেখানে থাকতে হবে।’
তথ্যচিত্রে বলা হয়, ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জেন জির বেশিরভাগের কাছে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে থাকলেও অনেক অভিভাবকের কাছে তিনি ছিলেন ট্রাজিক নায়িকা। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৭১ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু এর চার বছর পর শেখ হাসিনার ইউরোপর সফরের সময় তার বাবাকে সপরিবারে সামরিক অভ্যুত্থানে হত্যা করা হয়।
পরে বিদেশে নির্বাসন জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এই সময়ে বিরোধীদলের অনেক নেতাকর্মীকে হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী বিনাবিচারে আটকে রাখে।
