২০/০৬/২০২৫, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ
31.3 C
Dhaka
২০/০৬/২০২৫, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ

গাজীপুরে কর্মস্থলে পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু, সহকর্মীদের দাবি কর্তৃপক্ষের অবহেলায়

গাজীপুরে জেএল ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক (সোয়েটার) কারখানায় কাজ করার সময় শ্রমিক টিঠন মিয়া হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুর খবরে সহকর্মী শ্রমিকেরা অ্যাসেম্বলী পয়েন্টে জড়ো হয়। কোনোরকম অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ ওইদিন বিকেল ৫টায় কারখানা ছুটি ঘোষনা করে। কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থ্পাক (জিএম) সাঈদ শিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল রবিবার (১১ মে) মধ্যাহ্ন (লাঞ্চ) বিরতির পর কারখানার উৎপাদন ফ্লোরে কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে আমাদের প্যাকিং সেকশন এসি করা। এখানে গরম লেগে স্ট্রোক করার কোনো কারণ নেই। জেএল ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানা জয়দেবপুর থানাধীন বানিয়ারচালা (বাঘের বাজার) এলাকার সাফারি পার্ক সড়কে অবস্থিত। এ কারখানার বিভিন্ন সেকশনে ২ হাজার ৭৫০ জন শমিক কর্মচারী কাজ করে।

নিহত টিঠন মিয়া নেত্রকোনা জেলা সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে। সে ওই কারখানার ফিনিশিং শাখার সাধারণ অপারেটর পদে কর্মরত ছিল।

ওই কারখানার শ্রমিকরা জানান, মধ্যাহ্ন (লাঞ্চ) বিরতির পর টিঠন মিয়া সেকশনে এসে কাজে যোগ দেয়। হঠাৎ তার বুকে ব্যথা অনুভব হলে সহকর্মীরা তাকে কারখানার মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাওনা চৌরাস্তা আল-হেরা হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। সেখানে নিয়ে গেলে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শ্রমিকেরা আরো জানান, অসুস্থ শ্রমিককে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অবহেলা রয়েছে। তাদের অবহেলার কারণে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাদের সহকর্মী টিঠন মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর শ্রমিকেরা কারখানার বাহিরে কিছুক্ষন নিহত শ্রমিকের সকল পাওনা ও ক্ষতিপূরনের পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ করে। পরে কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থ্পাক (জিএম) সাঈদ শিকদার শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে শ্রম আইন অনুযায়ী সকল পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিলে তারা শান্ত হয়। পরে কারখানার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিহত শ্রমিকের মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে তার গ্রামের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সাইদা ইমরোজ জানান, অতিরিক্ত গরমে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শ্রমিক টিঠন মিয়ার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

জেএল ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানার অপারেশন সেকশনের মহাব্যবস্থ্পাক (জিএম) দুশান্তা কুমার বলেন, আমাদের ওই প্যাকিংম্যান টিঠন মিয়া লাঞ্চ শেষে কারখানায় প্রবেশ করে। আমি তার সহকর্মীদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে হঠাৎ টিঠন মিয়ার বুকে ব্যাথা উঠে এবং শরীর ঘেমে যায়। পরে সে তার সহকর্মীদের সাথে কারখানার মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসককে বুকে ব্যথার কথা বললে তাকে গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ দেয়। চিকিৎসক বললো ঔষধ খাওয়ার পরে সে বলল সে ভালো আছে। ১০ মিনিট পর আবার বুকে ব্যথার কথা জানালে কারখানার মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক বলে তুমি এখন সুস্থ আছো, স্বজনদেরকে খবর দিয়ে বলো তোমাকে বাড়ীতে নিয়ে যেতে। অফিস থেকে তার বাড়ীতে যোগাযোগ করার আগেই টিঠন মিয়ার স্বজনেরা কারখানায় চলে আসে। ততক্ষণে তার ব্যথা আরো বেড়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মাওনা চৌরাস্তা আল হেরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

তিনি আরো বলেন, কারখানার পক্ষ থেকে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং তার পরিবারের কোনো সদস্য যদি এ কারখানায় চাকরি করতে ইচ্চুক হলে তাকে চাকরি দিয়ে দিবে। তাছাড়া শ্রম আইন অনুযায়ী তার সকল পাওনা পরিশোধ করা হবে।

জেএল ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থ্পাক (জিএম) সাঈদ শিকদার বলেন, কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অবহেলার বিষয়ে শ্রমিকেরা যে অভিযোগ জানিয়েছে তা সঠিক নয়। প্যাকিংম্যান টিঠন মিয়া অসুস্থতাবোধ করার সাথে সাথেই কারখানার ব্যবস্থাপনায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ খান বলেন, শ্রমিক মৃত্যুর খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ওই কারখানায় গিয়ে জানতে পারে অতিরিক্ত গরমে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওই শ্রমিক মারা যায়। তার মৃত্যুর খবরে শ্রমিকেরা উত্তেজিত হলে কারখানা কর্তৃপক্ষ নিহত শ্রমিকের সকল ক্ষতিপূরনের আশ্বাসে তারা শান্ত হয়।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে যায়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে দ্রুত স্থানীয় মাওনা চৌরাস্তা আলহেরা হাসপাতালে পাঠায়। ওই হাসপাতাল থেকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার্ড করলে জরুরী বিভাগের চিকিসক ওই শ্রমিককে মৃত ঘোষনা করে। +

এনএ/

দেখুন: গাজীপুরে গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে কারখানার পরিত্যক্ত তুলা

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন